খাগড়াছড়ি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৫ পিএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫০ পিএম
পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি খাগড়াছড়ি। প্রবা ফটো
সহিংসতার চার দিন পরও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি খাগড়াছড়ি। আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পাহাড়ি-বাঙালি সকলেই প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান। এদিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
আজ সোমবার ( ২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শেষ হচ্ছে। তবে জেলার পৌর শহরে ছোট ছোট যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলছে। অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং না থাকলেও আতঙ্কের কারণে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অবরোধকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার প্রতিবাদে গত শনিবার সকাল থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে পাহাড়ি ছাত্র-জনতা। এদিকে অগ্নিসংযোগের চারদিন পর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে কয়েকজন বিক্রেতা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহাড়ে সহিংসতায় জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে শান্তি ফেরাতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পার্বত্য এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতি বজায় থাকাটা জরুরি।
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশিদ বলেন, অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হচ্ছে। পরে জেলা ও উপজেলা কমিটি প্রতিটি এলাকায়, প্রতিষ্ঠানে যাবে। কার কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারা সেটে নিরূপণ করবেন। সেই ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ পরে ক্ষতিপূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে চার জন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের জেরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে লারমা স্কয়ারে অন্তত শতাধিক দোকান, বাড়িঘর ও যানবাহন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ডাকে খাগড়াছড়িতে তৃতীয় দিনের মতো চলছে অবরোধ। অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটি, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়িসহ উপজেলাগুলোর আন্তঃসড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় এত ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, সেই হত্যার ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, হত্যার শিকার মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহার তিন আসামির মধ্যে দুজন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে জেলায় বিভিন্ন থানা,ইউনিয়ন ভিত্তিক,পাড়ায়,মহল্লায় পাহাড়ি-বাঙ্গালিরা সম্প্রীতি সমাবেশ করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ চলমান রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে কাজ করছেন। বর্তমানে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট ভোরে জেলা সদরের শালবন এলাকার বাসিন্দা মামুনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে পিটিয়ে আহত করার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার জের ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতায় চারজন নিহত ও উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা থেকে বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার সমাবেশ থেকে এ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল।