বেতাগী (বরগুনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৮ এএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৪৮ এএম
বরগুনার বেতাগী উপজেলার স্থানীয় বাজারে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্যপণ্য নিয়ে বসেছেন বাঁশশিল্পের এক কারিগর। প্রবা ফটো
আধুনিকতার ছোঁয়ায় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের বাহারি পণ্যের দাপট দিনদিন বেড়েই চলেছে। এতে হারিয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প। হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি হরেকরকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।
দেড় লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার বেতাগী উপজেলা। একটা সময় এ উপজেলার প্রতিটি ঘরে শোভা পেত বাঁশের তৈরি কুলা, চালন, ঝুড়ি, ডালা, চাটাই, ধান রাখার ও মানুষের বসার জন্য মোড়া, মাছ ধরার পলো ও মালামাল পরিমাপের পাল্লা।
জানা গেছে, কয়েক দশক আগেও উপজেলার বিবিচিনি, বেতাগী পৌরসভা, বেতাগী সদর ইউনিয়নের হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ ও সরিষামুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। পরিবারের সব সদস্যের সহযোগিতায় বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে বিক্রি করেই তাদের সংসার চলত। খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পারত তারা।
বর্তমানে প্লাস্টিকের বাহারি পণ্যসামগ্রী এ বাজার দখল করেছে। প্লাস্টিক পণ্য দামে সস্তা হওয়ায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমছে। একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমছে বাঁশঝাড়। এতে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাভ কম হচ্ছে। তাই বংশপরম্পরায় এ পেশায় নিয়োজিতরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা বেগম জানান, ‘কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসা পুরোনো এ বাঁশশিল্প রক্ষার জন্য কারিগরদের সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
সরেজমিনে কথা হয় উপজেলার ফুলতলা গ্রামের রত্না রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেশি লাভে এনজিও থেকে লোন ও ধারদেনা করে কোনোরকমে বাপদাদার এ পেশা আঁকড়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’
উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নিতাই লাল বলেন, ‘এখন আর এসব কাজ করে পোষায় না। আর বাজারেও এসব জিনিসের চাহিদা কম। বাপদাদারা এ পেশায় কাজ করে গেছেন। তাদের কাছ থেকেই কাজ শিখেছি। তাই অবসরে টুকটাক এসব কিছু বানিয়ে হাত খরচ চলে। তা ছাড়া আর কিছু দেখছি না।’
বেতাগী পৌরসভার বাসন্ডা এলাকার বিপুল হাওলাদার বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে যে বাঁশ কিনতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগত সে বাঁশ কিনতে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগে। এ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে কিছু তৈরি করে বিক্রি করতে গেলে অনেক সময় বাঁশের দামও ওঠে না। তা ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘরবাড়ি নির্মাণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না বাঁশঝাড়।’
বেতাগী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, ‘উপকূলের ঐতিহ্য বাঁশশিল্প টিকিয়ে রাখতে দরকার পৃষ্ঠপোষকতার। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও কাজ করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমদ বলেন, ‘বাঁশশিল্প যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে উঠতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরিতে সবার এগিয়ে আসতে হবে। আর তারা সহযোগিতা চাইলে পরামর্শসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।’