দাবি পরিবারের
বরগুনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:২৩ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৩২ পিএম
মাসুদ কামাল তোফাজ্জল। ফাইল ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তোফাজ্জলকে হত্যা করার আগে মোবাইলে কল করে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন তোফাজ্জলের ভাবি শরিফা আক্তার।
নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
শরিফা আক্তার বলেন, “গতকাল (বুধবার) রাতে আমার ফোনে দুটি নম্বর থেকে কল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘তোফাজ্জল মোবাইল চুরি করেছে, ওকে আটকে রাখা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে দুই লাখ টাকা পাঠাতে হবে।’ পরে আমি ওর আত্মীয়-স্বজনকে জানাই। সকালে জানতে পারি ওকে হত্যা করা হয়েছে। আমার দেবর তোফাজ্জল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
তিনি আরও বলেন, ‘তোফাজ্জল ২০২০ সাল থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, কিন্তু চোর নয়। পরিবারের কেউ না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো যায়নি। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব সময় এলাকাতেই থাকতেন।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তোফাজ্জল পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। বঙ্গবন্ধু ল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে তোফাজ্জলের বাবা আবদুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, ২০১৩ সালে মা বিউটি বেগম লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একমাত্র বড় ভাই নাসির পুলিশে চাকরি করতেন। ২০২৩ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনিও মারা যান। পরিবারে রয়েছেন একমাত্র বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই সন্তান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জল তার এলাকার একটি মেয়েকে পছন্দ করতেন। মেয়ের পরিবার ওই মেয়েকে অনত্র বিয়ে দেওয়ার পর তোফাজ্জল ২০২০ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরিবারের কেউ না থাকায় পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরতেন তিনি। ক্ষুধার প্রয়োজনে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেতেন।
তোফাজ্জলের প্রতিবেশী লিটন তালুকদার বলেন, ‘তোফাজ্জল একজন মেধাবী ছাত্র, কয়েক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন। পরিবারের কেউ না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো হয়নি। মানুষের কাছে হাত পেতে খেতেন। এলাকায় চুরি বা অন্য কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ওর হত্যার খবর শুনে আমরা শোকাহত। এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি জানাই।’
তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ‘তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আছেন চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন। মরদেহ আনার পর জানাজা শেষে বাবা মায়ের পাশে দাফন করা হবে।’
তোফাজ্জলের চাচা ফজলুল হক বলেন, ‘তোফাজ্জেলকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি।’