আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রথম মাসে চট্টগ্রামে চলে মামলা দায়েরের উৎসব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের নানা ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করেছেন। এসব মামলায় আসামি করা নিয়ে ‘নীরবে’ চলে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি করতে নানা ধরনের প্রতারণারও আশ্রয় নিচ্ছে একটি চক্র। আবার আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এর সঙ্গে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ।
আসামি করার নামে প্রতাণার এমন একটি ঘটনা ধরা পড়ে গত ২০ আগস্ট রাতে। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই প্রতিবেদককে ভয়ার্ত কণ্ঠে ফোন করেন আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রহিম শেখ (ছদ্মনাম, ভবিষ্যতে মামলা এড়ানোর স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না।) যিনি জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। বললেন, ‘ভাই, কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় আমাকে জড়ানো হচ্ছিল। মামলার অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিতে ২ লাখ টাকা চেয়ে একজন উপপরিদর্শক পরিচয়ে ফোন দিয়েছেন। প্রথমে বলেছেন তার সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করতে আমি ভয় পাচ্ছিÑ বলার পর ওই ব্যক্তি বলছেন, একাধিক বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠাতে। শেষে আমি কিছু টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছি। এখন বলছে, আমার আরেকজন কর্মীর নাম আছে। সেই নামটি বাদ দিতে হলে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।’
অভিযোগের কপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসামিদের নাম-ঠিকানা ঠিক আছে। পরে কোতোয়ালি থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, যে নামটি বলা হয়েছে, সেই নামে কোনো উপপরিদর্শক কোতোয়ালি থানায় নেই। এমনকি কর্মরত কোনো কনস্টেবলও নেই ওই নামে। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা নিশ্চিত হন, তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন। মাঝখানে কিছু টাকা গচ্ছা গেছে।
এই ঘটনার দুদিন পর ২২ আগস্ট আরও একজন আওয়ামী লীগ নেতার ফোন। এবারের ঘটনা পাঁচলাইশ থানায়। ওই থানার একটি হত্যা মামলায় নাকি তাকে জড়ানো হচ্ছে। যথারীতি পাঁচলাইশ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ২২ আগস্ট পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলার এজাহার নিয়ে কেউ যাননি। অতএব, মামলার বিষয়টি সঠিক নয়।
এভাবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে একটি চক্র। ভয়ে নেতারা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাচ্ছেন না। পরিচিত মাধ্যমে থানায় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বা কেউ কেউ বিকাশে টাকা দিচ্ছেন।
অভিযোগে নাম থাকায় সেই নাম বাদ দিতে টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে অভিযোগের কপি দিয়ে একজন ফোন করে বললেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে আমার নাম বাদ দেবেন। আমি ২০ হাজার টাকা দিই। পরে আরেকটি অভিযোগের কপি পাই। সেখানে আমার বাদ দেওয়া হয়।’
প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে নামে-বেনামে এসব চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও আদালতকে ঘিরে আইনজীবীদের একটি চক্রও এক ধরনের চাঁদাবাজির মচ্ছব তৈরি করেছে বলে দাবি ছাত্রদলের এক নেতার। ওই নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আইনজীবীদের একটি চক্র আছে। তারা একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এজাহার বানান। সেখানে ২০০ থেকে ৩০০ আসামি রাখেন। পরে সেই খসড়া আসামিদের কাছে পাঠান। অনেকের থেকে টাকা নেন।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে এমন চাঁদাবাজির একটি কল রেকর্ড এসেছে। যেখানে একজন ছাত্রলীগ নেতাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি কখনও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের পদের জন্য সিভি জমা দিয়েছিলেন কি না। দিয়েছিলেন বলার পর তাকে বলা হয় সদরঘাট থানায় যদি আপনার এই সিভিটা দিয়ে আসিÑ কতগুলো মামলার আসামি হবে জানো? একপর্যায়ে ওই প্রান্ত থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকায় দফারফা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের নাম কিংবা ওই প্রান্তে কার সঙ্গে কথা বলছেন তা প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘এভাবে অনেকের কাছ থেকেই চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।’