× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘বন্ধু উনি লাখ দুয়েক বলছে, আমি দিবানে’

সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৮ পিএম

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর খুলনায় দখল পাল্টা-দখলের পাশাপাশি হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও দখলের ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি হামলা ও মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনাও থেমে নেই। এমনকি বিএনপিনেতার বন্ধু হয়েও ছাড় পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায়।

ইতোমধ্যেই খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ খালিদ আহমেদের সঙ্গে বিএনপির দুই নেতার চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা ম্যানেজ করার কথা বলে লাখ দুয়েক টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই বিএনপি নেতা হলেন- ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শেখ রিয়াজ শাহেদ ও খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম হোসেন। তবে বিএনপির দুই নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঁদা দাবির ভিডিও এডিট করা ও ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। আর খুলনা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কোথাও কেউ চাঁদা দাবি বা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালিদ আহমেদ ও রিয়াজ শাহেদ বাল্যবন্ধু। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে গণহারে মামলা চলাকালে কোনো একসময় আওয়ামী লীগ খালিদের সাথে কথোপকথনের নিজের লোকেরাই ভিডিওটি ধারণ করেছেন।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রিয়াজ শাহেদের নম্বর থেকে খালিদ আহমেদকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হয়। খালিদের পাশ থেকে অন্য কেউ কথোপকথনটি ভিডিও করেছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে রিয়াজ শাহেদ ফোনটি শফিকুল ইসলাম হোসেনের কাছে ধরিয়ে দেন। ফোনে শফিকুল ইসলাম হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘ওইখানে আমাদের মেইন লোক রিয়াজ শাহেদ। সে বারবার বলেছে, সে আমার ছোটবেলার বন্ধু। তার ব্যাপারটা একটু দেখতে হবেনে। আমরা এগুলো করি না। তারপরও এখন করতে হবে। ওর (রিয়াজ) দিকে একটু খেয়াল-টেয়াল রাইখেন। ঝামেলা আছে তো অনেক।’

খালিদ : ‘ভাই কী করতে হবে বলেন ভাই’। হোসেন : ‘কী করতে হবে তো বোঝেনই, একটু হেল্প-টেল্প করা লাগবে।’ খালিদ : ‘আপনি একটু বইলে দেন আমি সেভাবে ব্যবস্থা কইরে দিচ্ছি।’

হোসেন : ‘এখন বিভিন্ন জায়গা ম্যানেজ করা লাগবে তো। ও (রিয়াজ) বলবেনে।’ খালিদ : ‘আপনার মুখ দিয়ে শুনলে আমার মনডা ঠান্ডা হবে।’ হোসেন : ‘দেখেন লাখ দুই টাকা ম্যানেজ করে দেন।’ খালিদ : ‘ঠিক আছে আমি লাখ দুই টাকা ম্যানেজ করে দিচ্ছি।’ 

এই সময় ফোনটি রিয়াজের কাছে দেওয়া হয়। রিয়াজ শাহেদ বলেন, ‘বন্ধু আমি চেষ্টা করতেছি; ভাইরে ম্যানেজ করেছি অনেক কষ্টে।’ খালিদ : ‘বন্ধু উনি লাখ দুয়েক বলছে। আমি দিবানে। উনি কে?’ রিয়াজ শাহেদ : ‘উনি আমাদের মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হোসেন ভাই, নাম কবি না কাউকে।’ খালিদ : ‘কবো না, আমি দেখতেছি।’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রিয়াজ শাহেদ বলেন, ‘আমার বক্তব্য এডিট করে কেউ এটা বানাইছে। আমি নিজে বাদী হয়ে খালিদের নামে মামলা দিছি। ওর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা দিলে টাকা চাব কেন বা টাকা চাইলে আবার তার নামে মামলা দেবো কেন?’

খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম হোসেন বলেন, এ ধরনের কোনো কথা কারও সঙ্গে আমি বলিনি। পুরো ভিডিও বানোয়াট ও মিথ্যা। এটা আমার কণ্ঠ না। কেউ অ্যাপস দিয়ে এটা বানিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর খালিদ আহমেদকে ফোন দেওয়া হলে অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানান, উনাকে (খালিদ) এখন পাবেন না। পরে তিনি আপনাকে ফোন দেবেন। তবে তিনি (খালিদ) আর ফোন ব্যাক করেননি।

এদিকে গত শুক্রবার বিকালে খালিদ আহমেদ বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, একটি প্রতারক গ্রুপ আমার কাছ থেকে টাকা হাতানোর জন্য কলটি করে। ভিডিওতে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাদের কারও সঙ্গে যদি আমার কোনো রকম টাকা-পয়সার লেনদেন হতো, তাহলে আমি তিনটি মামলার আসামি হতাম নাকি।’

শুধুই নগরীর দৌলতপুরের একজন আওয়ামী লীগ নেতা নয়, পুরো মহানগরী ও জেলার ৯টি উপজেলায়ই চলছে হামলা ও মামলার নামে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনা। তবে সবাই গোপনে এসব চাঁদার টাকার লেনদেন সারছেন। কোথাও কোথাও কিছুটা জানাজানি হলেও কেউই স্বীকার করছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা মহানগরীর একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ী জানান, তাদের কাছে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন এসব ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নগরীর বড়বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী, সোনার ব্যবসায়ী, ডেভেলপার কোম্পানি ও প্লট ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানিকারকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়েও ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এসব চাঁদা দাবির ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম আসছে। যা এ দলের ভাবর্মূতিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে বলে নেতারা মনে করছেন। 

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকট শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন যৌথভাবে বিবৃতি দিয়ে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিএনপির নাম ভাঙেয়ে কেউ চাঁদা দাবি করলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার এবং বিএনপির অফিসে অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির এই দুই নেতা দাবি করেন, মহানগর ও জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড ও চাঁদা দাবির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়ায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বিএনপি কখনও বরদাশত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সংগঠনবিরোধী কাজ, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার ও হামলা-মামলা এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান মহানগরীর এই দুই নেতা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা