রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫৩ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৮ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্যান্সার তৈরি হয়েছে। এটিকে যত দ্রুত সম্ভব নির্মূল করে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। এজন্য আমাদের দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, আমাদের ধৈর্য ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক আদর্শ, দলাদলি, মুখোমুখি হওয়ার ট্রেডিশন ও কালচার থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরত থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতাকে মনে রাখতে হবে আমরা কোনো অথরিটি না। আমরা প্রেসার গ্রুপ। দেশ সংস্কারে আমরা যেসব কাজ করব, তা যেন আইন মেনে করি। আইনের বাইরে গিয়ে আমাদের কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব জায়গায় অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে প্রতি মাসে লক্ষ কোটি ডলার বেতন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। সেইসব পদের জন্য আমাদের নিজেদের তৈরি করতে হবে।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন চলেছে। বিগত সময় অনেক দল হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ হাসিনা সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে ছিল। তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আবু সাঈদ তার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এভাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।’
‘হাসিনা ও তার কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কিন্তু তার দোসররা এখনও দেশে আছে। তারা আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করবে। তাই যতদিন পর্যন্ত না দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসছে, ততদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঝুলিয়ে রেখেছিল মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, ‘এক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল। অথচ পদ্মাসেতু ও রেল সেতু তৈরির জন্য হাসিনা সরকার ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষের জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই বরাদ্দ পুরো রংপুর বিভাগে দেওয়া হয়নি। আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে গুলি চালানো হয়েছে। আমার ভাই-বোনদের লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকত। এরপরেও শেখ হাসিনা সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হাসিনা সরকারকে ভারকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। আগামীতে ভারতের আধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না।’
রংপুর বিভাগীয় দলের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ লিয়ন বলেন, ‘জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। এইসব গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। গণহত্যার বিচারের পর যদি তারা পারে তখন রাজনীতি করবে।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের আলোচনা শেষে ছাত্র-জনতার নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সমন্বয়করা। রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।