× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্ষমতার পালাবদল

চট্টগ্রামে নতুন চাঁদাবাজদের উত্থান

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫৪ এএম

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫৪ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সরকার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে দ্রুতই বদল হচ্ছে চাঁদাবাজদের চেহারা। চট্টগ্রাম বন্দরসহ পুরো চট্টগ্রামে পুরোনো চাঁদাবাজদের জায়গায় আসছে নতুন চাঁদাবাজ। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে চাঁদাবাজির ধরনও। এখন কেউ চাঁদা নিচ্ছে ‘আয়নাঘর’ খুলে। ফেসবুক ব্যবহার করেও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নব্য চাঁদাবাজদের থাবা পড়েছে গার্মেন্টস, পরিবহন সেক্টর, ফুটপাথ ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর। 

চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের গাড়ি আটকে রেখে চাঁদা দাবির অভিযোগে গত শনিবার ঘটনাস্থল থেকে ফজলুল করিম চৌধুরী নামে একজনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার হওয়া ফজলুল করিম সীতাকুণ্ড থানা যুবদলের আহ্বায়ক। চট্টগ্রামের বন্দর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্ক্র্যাপবাহী গাড়ি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ফজলুল করিমই সেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। 

গত ২ আগস্ট ফজলুল মিরসরাই ‍উপজেলায় কমলদহ এলাকায় অবস্থিত খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিপির কারখানার গেটে সিকিউরিটি গার্ডকে বেধড়ক পিটুনি দেন। সেই ফজলুলকে আটকের খবর শুনে সিপির একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কারখানার গেট অনুমতি ছাড়া খোলার নিয়ম নেই। অনুমতি নিয়ে গেট খুলতে সিকিউরিটি গার্ডের কিছুটা সময় লাগে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ফজলুল গার্ডকে মারধর করেন। মজলুমের অভিশাপ লাগে এটা শুনেছি। এত তাড়াতাড়ি লাগে সেটা ভাবতে পারিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করা পুরোনো অনেক চাঁদাবাজের একজন ফজলুল। অধিকাংশ চাঁদাবাজের পরিচয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানেন। কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করছেন না। তারপরও যে কয়েকজন ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন, ফজলু তাদের একজন। আটকের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার তথ্য জানান যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল। যদিও বহিষ্কারের পর ফজলু সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, চুরি ঠেকাতে গিয়েই তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন। 

ফজলু নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও বাস্তবে ৫ আগস্টের পর একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চাঁদার দাবিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর মালিকপক্ষ ফজলুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং পরে ব্যবসা চালুর সুযোগ পান মালিকেরা। 

ফজলুর বিরুদ্ধে যখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং আশপাশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলছে, তখন মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসির মোড়সহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুর আলম সোহাগের বিরুদ্ধে। তার সহযোগী হিসেবে বরিশাল কলোনির রাজু ও জাহাঙ্গীর ওরফে টুকু মোল্লার নামও আলোচনায় এসেছে। এই চক্রটির চাঁদাবাজি ছাড়াও টর্চার সেল খুলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীদের আটকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। গত এক মাসে সেখানে বহু লোককে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে। 

নুর আলম সোহাগ, জাহাঙ্গীরসহ তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মিরসরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৩০ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে মহানগরীর সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে থেকে আমাকে ধরে দামপাড়া গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের পাশের একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়।’ শুধু তাই নয়, গিয়াস উদ্দিনের ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিন দিনে তার স্বজনদের কাছ থেকে অন্তত তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন কেন থানায় অভিযোগ করলেন নাÑ সেই বিষয়ে দাবি করেছেন, ‘এখন অভিযোগ করার মতো পরিবেশ নেই।’ 

এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন থানায় অভিযোগ করেননি। তবে সোহাগ-জাহাঙ্গীর চক্রের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চক্রটিকে ছায়া দিয়ে রাখেন মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন। গিয়াস উদ্দিনকে আটকের পর নির্যাতন করে চাঁদা আদায়কারী সোহাগ-জাহাঙ্গীরকে ছায়া দিয়ে রাখেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তুহিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। ২০১৩ সালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল।’ চাঁদাবাজদের সহযোগিতা করেন কি না আবার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের প্রশ্রয় দিই না। এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ 

এ ছাড়া বায়েজিদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে শিবিরের সাবেক ক্যাডার সাজ্জাত হোসেন ও সরোয়ারের অনুসারীদের দ্বন্দ্বের জের ধরে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একইভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিআরটিসি, চৈতন্যগলি এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজি করার অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক কাজী আব্দুল্লাহ আল-মামুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন। 

চট্টগ্রাম বন্দর

চাঁদাবাজদের নেতিবাচক প্রভাব সর্বাধিক পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে চাঁদাবাজি ছিল ওই সরকারের অনুগতদের কবজায়। এখন নতুনরা আসার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই নতুনদের তালিকায় বিএনপিসহ অন্য কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূমিদস্যুরাও। পরিবর্তিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতকারী বন্দরের মালিকানাধীন পূর্ব পতেঙ্গা মৌজার লালদিয়ার চর এলাকার দি চিটাগাং পোর্ট অ্যাক্ট ১৯১৪-এর তফসিলভুক্ত জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর বন্দর সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে জমি দখলের অভিযোগ জানান। 

অন্যদিকে আবু সাঈদ হারুন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের ঠিকাদার ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ফকির হাটা গোসাইলডাঙ্গা ৩নং জেটি গেট এলাকার আবু সাঈদ হারুন নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে অব্যাহতভাবে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। 

ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকেও নতুনরা চাঁদা নিচ্ছে উল্লেখ করে চকবাজার এলাকার একজন হকার বলেন, সরকার পতনের পর কয়েক দিন চাঁদা দিতে হয়নি। এখন নতুন একজন এসে টাকা নিয়ে যায়। তার নাম এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা