পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৪ পিএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
মেগা প্রকল্পের নামে শেখ হাসিনা লাখ লাখ কোটি টাকা মেগা দুর্নীতি করে বাংলাদেশকে হোগলা করে ছেড়েছেন। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসমাবেশে মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ১৬ বছর বাংলাদেশকে চুষে খাওয়ার পর যা ছিল, বোনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ১৬টা লাগেজে করে নরেন্দ্র মোদির ঘরে চলে গেছেন। ১৯৭৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫০ বছর ছিল শেখ হাসিনার প্রতিশোধের রাজনীতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি আরেকটি দেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের ওপর প্রতিশোধ নেননি, আওয়ামী লীগের ওপরও নিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছিলেন, পঁচাত্তরে আপনারা কোথায় ছিলেন? তিনি একবারও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কথা ভাবেননি, পালিয়ে গেছেন। তার মতো একজন প্রতিশোধপরায়ণ সাইকোপ্যাথ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে বছরের পর বছর মানুষের কাঁধের ওপর বসিয়ে শাসন করার ব্যবস্থা করেছেন, শুধু এই কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার হওয়া উচিত।
মামুনুল হক আরও বলেন, ট্যাক্সের টাকায় কেনা জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হেলিকপ্টার থেকে শেখ হাসিনা গুলি করেছেন। হাতুড়ি লীগ, হেলমেট লীগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্রদের হত্যা করেছেন। তিন বছরের শিশু পর্যন্ত বাবার কোলে থেকেও রেহাই পায়নি।
মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার দুটি মূল দর্শন ছিল। প্রথম দর্শন ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি। ১৯৭৫ থেকে ২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল প্রতিশোধের। এই জাতি কোনোদিন যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, তার সমস্ত আয়োজন তিনি সম্পন্ন করেছিলেন। এই দেশকে তিনি স্বাধীন দেশ রাখতে চাননি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতকে ধসিয়ে এ স্বাধীন দেশ এবং জাতিকে একটি পরনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এই দেশে শেখ হাসিনা নেই কিন্তু তার দোসররা আছে। তার পেতাত্মারা আগস্ট বিপ্লবকে ছিনতাই করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা হয়েছিল কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তৈরি হবে না তার ভিত্তিতে। কিন্তু আমরা দেখলাম বিজয়ের পরে সাত কোটি মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাহাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর একটি সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাহাত্তরের এই চেতনার মাধ্যমে একাত্তরের চেতনাকে হাইজ্যাক করা হয়েছিল। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেও শেখ হাসিনার রক্ততৃষ্ণা মেটেনি। তিনি প্রয়োজনে লাখো মানুষ হত্যা করেও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ছিল শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নাটক। এখন বাংলাদেশ সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগস্ট বিপ্লবের ফসল হবে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশে ইসলামের বিপ্লব, আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ, খেলাফতের বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতা রাজপথে থাকবেÑ কেউ আগস্ট বিপ্লবকে ছিনতাই করতে চাইলে আমরা রুখে দাঁড়াব।
মামুনুল হক বলেন, আমাদের অসংখ্য ভাই কাদিয়ানিদের মিথ্যা মামলার শিকার। দয়া করে ফ্যাসিবাদের আমলে করা অন্য সকল মিথ্যা মামলার আগে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের দ্বারা করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা কাদিয়ানিদের এক মাস সময় দিলাম। এক মাসের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, স্যালুট জানাই সেই সকল মাকে, যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত করার লক্ষ্যে নিজের কলিজার টুকরো বুকের ধনকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা পাশের দেশেরই রয়েছেন। যেকোনো সময় নাকি দেশে ঢুকে যেতে পারেন। আমরাও চাই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। তিনি সবসময় সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিশৃঙ্খলা করেন। রাতের বেলা নাগিন হয়ে সংখ্যালঘুদের দংশন করেন। আর দিনের বেলা গিয়ে ওঝা হয়ে সেই বিষ ঝাড়েন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রবিবার ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক ক্লাব মাঠের জনসভায় মামুনুল হক বলেছেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতারাই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিলেন। এ কারণেই শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কাছে কীভাবে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া যায় তার চিন্তা করছিলেন। প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের নেতাদের রেখে পালিয়েছেন ভারতে।
দিনাজপুর প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শহরের ইনস্টিটিউটে এক সভায় মামুনুল হক বলেছেন, শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। হাজার হাজার মানুষ হত্যার দায়ে তাকে ধরে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তাই যেকোনো মূল্যে বিএনপিসহ ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নতুন স্বাধীনতা ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।