× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লক্ষ্মীপুরে বন্যা

পানিবন্দি দুই শতাধিক পরিবার বেড়িবাঁধটি আছে বলেই বেঁচে আছি

হাসান মাহমুদ শাকিল, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৭ পিএম

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে ২৫ দিন ধরে রয়েছেন পশ্চিম দিঘলী গ্রামের রোকসানা আক্তার। প্রবা ফটো

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে ২৫ দিন ধরে রয়েছেন পশ্চিম দিঘলী গ্রামের রোকসানা আক্তার। প্রবা ফটো

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ প্রায় ২৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। প্রথমে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও পরে বন্যা। ঘরে-বাইরে পানি থইথই করছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। পানিও কমছে না দুর্ভোগও থামছে না। দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। ভুক্তভোগীরা জানান, এত পানি আর কখনও এ অঞ্চলে দেখা যায়নি। মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তাও ছিল অপ্রতুল। ওয়াপদা বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে বসবাস করে আসছে পরিবারগুলো। বেড়িবাঁধের রাস্তাটি আছে বলেই মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। রাস্তাটি আছে বলেই বেঁচে আছেন তারা।

সরেজমিনে সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ সড়কের পূর্ব দিঘলী, পশ্চিম দিঘলী, দক্ষিণ রাজাপুর ও চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, একসময় বেড়ির পাকা রাস্তাটিতে এখন ইটের কোণ মাথা তুলেছে। মান্দারী-দিঘলী সড়ক থেকে বেড়িবাঁধে উঠতেই রাস্তার ওপরে ২-৩টি অস্থায়ী ছাউনি দেখা যায়। এ রাস্তায় যতদূর যাওয়া যায় ততদূরই অস্থায়ী ছাউনিতে ঘেরা। তবে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। দূর থেকে শুধু ছাউনিগুলোই দেখা যায়। রাস্তা আছে বলে মনে হয় না।

রাস্তার বাসিন্দা মমিন উল্যা, জাহাঙ্গীর আলম, মনির হোসেন, রোকসানা বেগম, জাহিদা বেগম, নুর হোসেন, শাহাবউদ্দিন, হারুনুর রশিদ ও নুরনবীসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, প্রায় ২৫ দিন ধরে তাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। প্রথমে বৃষ্টিতে প্রায় ২ ফুট পানি জমে। পানি একটু একটু কমতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করে নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি এসে ডুবিয়ে দেয় রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার ও বসতঘরগুলো। ততক্ষণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ভর্তি হয়ে গেছে। তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। তখন বেড়িবাঁধের রাস্তাটিই সবার আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। রাস্তাতেই বাঁশের খুঁটি দিয়ে ত্রিপল ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে বসবাসের জন্য ছাউনি তৈরি করা হয়। শুধু নিজেদের জন্য নয়। গবাদিপশুর জন্যও ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। দুই শতাধিক পরিবার রাস্তাটিতে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই কৃষিজীবী। বন্যার কারণে এবার চাষাবাদ সম্ভব নয়। বীজতলা তৈরি করলেও ধানের চারা রোপণের আগেই বন্যা সব শেষ করে দিয়েছে। এখানকার কৃষকরা আর্থিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া ফলদ গাছগুলো মরে যাচ্ছে পানিতে। বন্যায় ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিতে চলাচলে মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বন্যার পানি শুকালেও মানুষ সহজে আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে না।

পূর্ব দিঘলী গ্রামের রোকসানা আক্তার বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ও খালের মাঝখানে সরকারি জমিতে থাকি। ঘরের ভেতর এখনও পানি। ঘরও ভেঙে যাচ্ছে। পড়ে যাচ্ছিল দেখে রশি দিয়ে টানা বাঁধ দিয়ে রেখেছি গাছের সঙ্গে। এখন এই বেড়িবাঁধটা আছে বলেই বেঁচে আছি।’

বন্যার্তদের পরিস্থিতি দেখতে পশ্চিম দিঘলী গ্রামে বুকপানি ভেঙে যেতে হয়। এ সময় দূর থেকে একটি শিশুকে কাঁধে নিয়ে বুকপানিতে এক নারীকে বেড়িবাঁধের দিকে যেতে দেখা যায়। তার নাম মুন্নি আক্তার। তিনি বলেন, আমি বাড়ি গিয়েছি। প্রতিদিন দুবার বাড়িতে যাই। বাড়িতে যেতে বুকপানি ভাঙতে হয়। চুরির ভয়েই প্রতিদিন কষ্ট হলেও বাড়ি যাই। আর আমরা এখন বেড়ির রাস্তার ওপর থাকি।

পশ্চিম দিঘলী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন কৃষক বলেন, কোমরের ওপরে পানি ভেঙে ঘরে ঢুকতে হয়। ঘরের ভেতরে সব কাদা হয়ে আছে। বাধ্য হয়েই ঘরে আসি। এত পানির মধ্যে ঘরে আসতে গেলে মনে আগুন জ্বলে ওঠে। পানির কষ্ট আর সহ্য হয় না। বেড়িবাঁধের রাস্তায় কোনোরকম রাত কাটাই। রাস্তাটি আছে বলেই কষ্ট হলেও আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছি।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, প্রায় ২ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। এ ছাড়া প্রায় ৬ হাজার মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। তবে অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা