গাইবান্ধা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৭ পিএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২২ ১৩:০৯ পিএম
গাইবান্ধায় বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ছবি: প্রবা
গৃহবধু আরিফা ও তাহমিনারা খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে শাক চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। স্বামীর পাশাপাশি নিজেরা শ্রম দিয়ে উৎপাদিত শাক বিক্রি করে সপ্তাহে অন্তত হাতে জমছে বেশ টাকা। ঝাড়াবর্ষা গ্রামের অনেক পুকুর-বিলে হয়েছে ভাসমান এই শাকের চাষাবাদ। তাদের সফলতায় অনেকেই এই পদ্ধতিতে শাক চাষাবাদ করতে উৎসাহিত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন থেকে মাটিতে নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে আসছে মানুষ। এখন সেই নিয়ম ভেঙে গাইবান্ধায় খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে শাক-সবজি ফলাচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা। কলাগাছের উপর কচুরিপানা বিছিয়ে বেড তৈরি করে তার উপর বীজ ছিটিয়ে নানা শাক-সবজির ফলাচ্ছেন সাঘাটা উপজেলার কৃষকরা।
গাইবান্ধায় বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ছবি: প্রবা
সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঝাড়াবর্ষা বিল ও রাস্তার পাশে জলাভুমিতে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়েছে। তাকালেই পাশাপাশি দেখা মিলবে পরপর ৮টি বেড। এসব পানিতে ভাসমান বেডে চাষ করা হচ্ছে কলমি, লাল, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি। প্রথম দিকে পরীক্ষামূলক ভাবে এই শাকের চাষাবাদ করা হলেও সফলতা মিলেছে ।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় এনজিও এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা। তুলনামূলক চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা।
চাষি আতিয়ার রহমান, আরিফা বেগম, তাহমিনা বেগম জানান, বর্তমানে তারা ভাসমান বেডে লাল, পুঁই ও কলমি ও ডাটা শাক চাষ করেছেন। উৎপাদিত শাক দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে প্রত্যেকের সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ শ টাকা বিক্রি করেছেন। এরপর তারা শীতকালীন সবজি চাষের পরিকল্পনা করছেন। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এ পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
একটি এনজিওর মাঠকর্মী মমতা খাতুন জানান, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের ১১টি জেলায় এই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক ভাসমান বেডে সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা বিল, বিষ পুকুর বিল ও গলাকাটা বিলে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজি চাষ চালু করা হয়েছে।
এখান থেকে একটি পরিবার নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সপ্তাহে ২৫শ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। একটি বেডে তিন থেকে চারবার যেকোনো শাক চাষ করা যায়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ্য হতে পারে ২৫ থেকে ৩০ ফুট (ছোট-বড় হতে পারে)। প্রস্থ চার-পাঁচ ফুট। বেডটি দুইটি স্তরে তৈরি করা হয়। এরমধ্যে নিচের স্তরে কলাগাছ দিয়ে একটি বেড তৈরি করা হয়। ওপরের স্তরের কচুরিপানা দেওয়া হয়। কচুরিপানা পচে গেলে উপরে বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। সাঘাটার এসব বিল এলাকার লোকজনকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আগ্রহী চাষিদের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝাড়াবর্ষা বিলসহ এই এলাকার পৃথক তিনটি স্থানে ২৪টি বেড তৈরি করা হয়েছে।
গাইবান্ধায় বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ছবি: প্রবা
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হাওরাঞ্চলে বেশি হয়। গাইবান্ধার ভাসমান বেডে সবজি চাষের এটা নতুন উদ্যোগ। সাঘাটা উপজেলার তিনটি স্থানে প্রাথমিকভাবে সবজি চাষ করায় এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। অন্যরাও দেখে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে ভাসমান সবজি চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।