এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০৮ পিএম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৮ জনই পরিষদে না আসার কারণে নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আবার এদের মধ্যে ৭ বারেরও নির্বাচিত একজন প্রবীণ চেয়ারম্যান রয়েছেন।
এসব জনপ্রতিনিধি বলছেন, নিরাপত্তাহীনতায় পরিষদে আসতে শঙ্কিত তারা। ইতোমধ্যে পঞ্চকরণ ও তেলিগাতী- এ দুই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে মোরেলগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদরুদ্দোজা টিপুকে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে গত ৫ আগস্টের পর থেকেই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৮টি পরিষদের চেয়ারম্যানরা তাদের দপ্তরে না আসায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পরিষদের সচিবরা পরিচালনা করছে নামমাত্র কার্যক্রম। তবে চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সপ্তাহে শুধু বুধবার খুলছেন সচিব। দু-একটি পরিষদের সদস্যরা সভা ডেকে রেজুলেশন করে প্যানেল চেয়ারম্যানের দ্বারা কোনোমতে পরিষদ চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে দু-একজন চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে দু-এক দিন অফিস করলেও সপ্তাহের প্রায় সময়ই থাকছেন অনিয়মিত।
পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, তেলিগাতী ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার, রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম, বনগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রিপন চন্দ্র দাস, চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলি আক্কাস বুলুসহ এ ৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ৫ আগস্টের পর থেকে একেবারেই পরিষদে আসছেন না। এ ছাড়াও বহরবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন হোসেন তালুকদার, বলইবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী খান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লাসহ ৩ চেয়ারম্যান মাঝেমধ্যে দু-এক দিন পরিষদে এলেও বেশিরভাগ সময়ই থাকছেন অনুপস্থিত।
এলাকার সচেতন মহল ও সাধারণ জনগণের অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত থাকার কারণে পরিষদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ কয়েম সনদ, পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সেবা নিতে এসে সাধারণ নাগরিকরা সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। পাশাপাশি পরিষদের কার্যক্রমে পানির ট্যাংক বিতরণ থেকে শুরু করে বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ তাদের বিগত কর্মকাণ্ডে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অনেকেই রোষানলে পড়েছে, তারা আসতে পারছে না এলাকায়। তবে নির্বাচিত এসব চেয়ারম্যান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশের পটপরিবর্তনের ফলে তারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ায় ২০১৬ সালে মামলা করায় সে মামলা তুলে নিতেও তার ওপরে রয়েছে চাপ। ইতোমধ্যে আবার কোনো কোনো চেয়ারম্যানের মৎস্যঘের দখল, বাড়িঘর ও পরিষদ কার্যালয়ে হামলা হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় পরিষদে যেতে পারছেন না তারা।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম তারেক সুলতান বলেন, যেসব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশসক মহোদয়ের এক আদেশে পঞ্চকরণ ও তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের কর্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ও আয়ন ব্যায়ন কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী কমিশনার ভূমিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।