× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিহতের পরিবারকে ‘না জানিয়ে’ মামলা, আসামিদের কাছে ‘চাঁদা দাবি’

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫২ পিএম

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫৩ পিএম

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাবলু। প্রবা ফটো

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাবলু। প্রবা ফটো

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডায় গুলিতে নিহত হন ফরিদপুর সদর উপজেলার মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যাপারী (২৯)। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাবলু একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১ সেপ্টেম্বর এ মামলাটি নথিভুক্ত করেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

মামলায় লাবলু নিজেকে নিহত সিরাজুলের খালাতো ভাই দাবি করলেও নিহতের স্বজনরা তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।

এদিকে মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই লাবলু আসামিদের কারও কারও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার আবেদনের কপি, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশনামা, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী পাঠিয়ে চাঁদা দাবি করে যোগাযোগ করতে বলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মামলার ব্যাপারে নিহত সিরাজুলের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার বাড্ডা থানায় কোনো মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

হাসিবুল হাসান লাবলু নামে এক ব্যক্তি সিরাজুলের খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে মামলা করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসিবুল হাসানকে আমি চিনি না। এ নামে আমাদের কোনো আত্মীয় নেই।’

এই মামলায় ১২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে আসামি করা হয়েছে।

ঘটনা ঢাকার হলেও মামলায় ফরিদপুর সদরে ২৩ জন, নগরকান্দায় ২৪ জন, সালথায় ৯ জন, বোয়ালমারী ২ জন ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ফরিদপুরে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি কাজী আবদুস সোবাহান, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সত্যজিৎ মুখার্জি, আওয়ামী লীগ নেতা মোকাররম মিয়া বাবু, ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা, সালথা উপজেলার রামকান্তুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইশারত হোসেনসহ জেলা ও উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ, ব্যবসায়ী ও হিন্দু নেতারা রয়েছেন।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলার রামকান্তুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইশারত হোসেন বলেন, ‘আমি ওইদিন (৫ আগস্ট) ফরিদপুরে সালথায় ছিলাম। কিন্তু রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় একটি হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করে বাদী আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন। টাকা দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দেবেন, না দিলে আরও মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।’

ফরিদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সত্যজিৎ মুখার্জি জানান, তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও মামলার নথি পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আসাদ মাতুব্বর বলেন, ‘ঢাকার ঘটনায় করা মামলায় ফরিদপুরে অবস্থান করা লোকদের আসামি করা বাস্তবসম্মত নয়। এ ধরনের মামলা দিয়ে নিরাপদ ব্যক্তিদের হয়রানি করার যুক্তি নেই। মামলার সূত্র ধরে কেউ যদি অনৈতিক সুবিধা দাবি করার চেষ্টা করেন, আমি আশা করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

হাবিবুর রহমান লাবলুর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি সালথার খলিশাডুবি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও বিএনপির রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে। তার নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লাবলু এলাকায় এসে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় ফরিদপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে চাঁদাবাজি করার জন্য।

হাসিবুল হাসান লাবলু দাবি করেন, নিহত সিরাজুলের মায়ের বোনের কোনো এক আত্মীয়ের সূত্রে তিনি খালাতো ভাই। সিরাজুলের বাবার অনুমতি নিয়েই মামলা করেছেন। সিরাজুলের বাবা তাকে চেনেন না জানালে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে যোগাযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। মামলায় ঢাকার বাইরের লোকদের নাম যুক্ত করা সঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।

৫ আগস্ট জনতা বাড্ডা থানা আক্রমণ করে। পুলিশ গুলি করতে করতে থানা থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের তায়জদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে সিরাজুল ব্যাপারী। পরদিন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিরাজুলের মরদেহ নিয়ে বিকালে ফরিদপুরে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন রাত ১০টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা