বাগেরহাট
শেখ সোহেল, বাগেরহাট
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:২৩ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০৩ পিএম
সংস্কার না হওয়ায় বাগেরহাটে বাস টার্মিনাল খানাখন্দে ভরে গেছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণসহ চালকদের। সম্প্রতি তোলা । প্রবা ফটো
বাগেরহাটে বাস টার্মিনাল সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরে গেছে। এমন বেহাল অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীসাধারণসহ চালকরা। জায়গার সংকটে গাড়ি পার্কিং করা হয় সড়কের পাশে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ভোগান্তি ও ঝুঁকি কমাতে দ্রুত টার্মিনালটি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন জেলার যাত্রীসাধারণসহ বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গছে, ২০০৪ সালে পৌরসভা এলাকার দুই একর জমির ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করে। সেই থেকে পৌরসভা এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেড়েছে যাত্রী ও দূরপাল্লার বাস চলাচল। এখন জেলার অভ্যন্তরীণ ৮টি রুটে তিন শতাধিক যাত্রী পরিবহনের বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এ ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন আন্তঃজেলায় প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। কিন্তু বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস পার্কিং করা হয় রাস্তার পাশে। অনেক কাউন্টারও টার্মিনালের বাইরে। যাত্রীদের ওঠানামা করানো হয় প্রধান সড়ক থেকেই।
বৃষ্টি হলেই টার্মিনালের ভেতরে ও আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় টার্মিনাল এলাকা। ফলে চালক ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। শুধু বর্ষাকালই নয়, সারা বছরই এমন বেহাল দশা বাস টার্মিনালের। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। ২০ বছরের অধিক পুরোনো এই টার্মিনালের সংস্কার ও সম্প্রসারণের দাবি যাত্রীসাধারণসহ বাসমালিক ও শ্রমিকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালের বেশিরভাগই কাদা। বৃষ্টি পড়লে পানিতে তলিয়ে যায়। আর পুরো টার্মিনালই ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। জরাজীর্ণ দেওয়ালে জন্মেছে পাকুড় গাছ। দেখলে মনে হয় পরিত্যক্ত কোনো এলাকা। অথচ এখানেই প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা নিয়ামুল মোল্লা নামে একজন বলেন, বাস টার্মিনালে কাদাপানি ও ছোট-বড় গর্তের কারণে ভেতরে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। তাই টার্মিনালের বাইরের কাউন্টার থেকেই টিকিট কাটতে হচ্ছে। শহরের ভেতরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। আর মহাসড়কের পাশে এমন একটি বাস টার্মিনালের অবস্থা আরও খারাপ।
তানিয়া জামান নামে ঢাকাগামী একজন যাত্রী বলেন, অনেক কষ্ট করে কাদাপানি পার হয়ে টিকিট কাটতে হয়। অনেক সময় পাশ দিয়ে গাড়ি গেলে ময়লা পানিতে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও বাধ্য হয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করতে হচ্ছে টিকিটের জন্য। আসলে এটা দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক কার্তিক সাহা বলেন, টার্মিনালে গেলে অনেক সময় যাত্রীসহ গাড়ি উল্টে গর্তের মধ্যে পড়তে হয়। যার ফলে অনেক যাত্রী এখন টার্মিনালের মধ্যে প্রবেশ করে না।
রাস্তায় গাড়ি রেখে যাত্রী তুলছে তিতাস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাস। বাসের চালক শেখ মধু বলেন, যাত্রীরা কাদাপানির কারণে ভেতরে গিয়ে গাড়িতে ওঠে না। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় যাত্রী তুলতে হচ্ছে। না হয় যাত্রী ছাড়াই টার্মিনাল থেকে গাড়ি ছাড়তে হবে।
কালাম শেখ নামে এক বাসচালকের সহকারী বলেন, শুধু যে বর্ষাকালে কাদাপানি তা নয়, সারা বছরই টার্মিনালে এমন বেহাল দশা। এখন বৃষ্টির পানি জমে কাদা হয়েছে। কিন্তু অন্যসময় গাড়ি ধোয়ামোছার পানি জমা হয়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এ রকম খারাপ অবস্থা।
কাউন্টার ম্যানেজার মো. হামিম বলেন, টার্মিনালের ভেতর অনেক আগে বিছানো ইট কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে কোনো সংস্কার কাজও হয়নি। সে কারণে টার্মিনালের এই বেহাল দশা।
জাহাঙ্গীর হাওলাদার নামে একজন পরিবহন মালিক বলেন, বাগেরহাট জেলার একমাত্র কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি। বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, ভালো কোনো যাত্রীছাউনি নেই, এভাবেই চলছে টার্মিনাল। পৌর মেয়রও নেই, তবে যারা দায়িত্বে আছে তাদের কাছে অনুরোধ, দ্রুত বাস টার্মিনাল সংস্কার করা হোক।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রিজভী বলেন, বাস টার্মিনালটি সম্প্রসারণ করার জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অধিগ্রহণ শেষ হলে দ্রুতই কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে।