মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯ পিএম
পায়ে বুলেট নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণায় দিন কাটছে বাবু মিয়ার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর সিটি বাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। প্রবা ফটো
৬৩ বছর বয়সি বাবু মিয়ার সময় কাটছে বিছানায়। পায়ের ভেতরে একাধিক বুলেট তার। থেমে থেমে রক্ত বেরিয়ে আসছে সেখান থেকে। ব্যথা আর তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। দু চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রু। দিনভর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাকে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই চিকিৎসার জন্য সরকারসহ সমাজের দানশীল, বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
একসময় বাবু মিয়ার কাঁধে ভর করে চলত পুরো সংসার। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস এখন তাকেই চলাফেরা করতে হয় অন্যের কাঁধে ভর করে। বিছানা থেকে উঠে বাথরুম পর্যন্ত যেতে পরিবারের একাধিক সদস্যের সহযোগিতা লাগে তার। চিকিৎসা করতে না পারায় দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের শঙ্কা যেকোনো সময় পচে যেতে পারে বাবু মিয়ার পা। এতে করে তিনি শেষ বয়সে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটছে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সবজি বিক্রেতা বাবু মিয়ার।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৯ জুলাই বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ছাত্র-জনতাদের দমাতে পুলিশ ছররা গুলি, রাবার বুলেটসহ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে দোকান বন্ধ করেন নগরীর সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা বাবু মিয়া। এ সময় তিনি হঠাৎ পায়ে আঘাত অনুভব করেন। পরে দেখেন পা থেকে রক্ত ঝরছে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তিনি ব্যথা নিয়েই দৌড়ে পালিয়ে যান।
পরে বাসায় এসে দেখতে পান তার পায়ে গুলি লেগেছে। পরদিন তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তার পা থেকে দুটি গুলি বের করে ওষুধ লিখে দেন। বাবু মিয়ার পায়ের গভীরে আরও কয়েকটি বুলেট রয়েছে, যা বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে দীর্ঘ প্রায় ৪৬ দিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে বাবু মিয়ার।
পরিবারে স্ত্রী, তিন ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনি রয়েছে। দিনমজুর ছেলেদের পক্ষে বাবার পায়ের অস্ত্রোপচার ও ওষুধ কিনে খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে বাবু মিয়ার পায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়াচ্ছে। কিন্তু পুরো চিকিৎসা তো আর হচ্ছে না।
বাবু মিয়া বলেন, আমি আন্দোলনে ছিলাম না। ছাত্র ও পুলিশের গণ্ডগোল লেগে গেল। এমন পরিস্থিতি দেখে দোকান বন্ধ করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার পায়ে রক্ত ঝরতে থাকে ও ব্যথা শুরু হয়। গুলি লাগার পর দৌড় দিয়ে আত্মরক্ষা করেছি। রাতে ব্যথা বাড়লে, পরের দিন মেডিকেলে যাই। সেখান অপারেশন করে কয়েকটি গুলি বের করে এবং এখনও কিছু গুলি পায়ের ভেতরে রয়েছে। দিনভর পা ব্যথা করে, হাঁটতে পারি না। কবে আবার সুস্থ হয়ে বাজারে যেতে পারব এই চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
ছেলে আশরাফুল হোসেন বলেন, বাবার পা থেকে ডাক্তার দুটা গুলি বের করে দিয়েছে। বাকি গুলি পায়ের বেশি গভীরে তাই বের করা সম্ভব হয়নি। মেডিকেল থেকে বলছিল যেসব ওষুধ লেখা হয়েছে সেগুলো খেলে গুলি পা থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু গুলি তো বের হয়নি বরং এখন পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ডাক্তার বলছে বাইরে বাবার অপারেশন করালে অনেক টাকা প্রয়োজন। ওষুধপত্রেরও খরচ রয়েছে। সেজন্য বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।
প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাবু মিয়া দিন আনে দিন খায়। এখন তার উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা পাড়া-প্রতিবেশী সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। সরকারি কিছু অনুদান পেলে পা থেকে অপারেশনের মাধ্যমে বুলেটগুলো বের করা যেত। তাহলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ. ম আখতারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আহত কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
সহযোগিতার জন্য বাবু মিয়ার ছেলে আশরাফুল হোসেনের মোবাইল নম্বর-০১৭৬১১৫৮৩৮৪ (নগদ)।