× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্যা পরিস্থিতি

হানির মইধ্যে মাইনষে আর কদ্দিন থাইকবো

হাসান মাহমুদ শাকিল, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:০৪ পিএম

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮ পিএম

কামরুল ইসলাম। প্রবা ফটো

কামরুল ইসলাম। প্রবা ফটো

প্রায় দেড় মাস পানিবন্দি হয়ে আছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। ধীরগতিতে পানি কমলেও বিন্দুমাত্র দুঃখ কমছে না মানুষের। এ দুই উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখলদারদের শত শত বাঁধ এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে পানিবন্দি মানুষজন। ১৪-১৫ বছর বয়সি কামরুল ইসলাম নামে এক কিশোর আক্ষেপের সুরে বলছিল, ‘৪৫ দিন ধরি আমরা হানির (পানি) মইধ্যে। অনেক কষ্ট হয়য়ের। হানির মইধ্যে মাইনষে আর কদ্দিন থাইকবো?’

সরেজমিনে বন্যাকবলিত কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের বাদামতলি ও চরবসু, রামগতির চরবাদাম ও চরপোড়াগাছা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে পানি থইথই করছে। তবে এ পানি দুয়েক দিন কিংবা এক সপ্তাহের জমা পানি নয়, প্রায় দেড় মাস আগ থেকে এ পানি জমে আছে। ধীরগতিতে কমলেও স্বস্তি ফিরছে না মানুষের মধ্যে। এখনও এসব এলাকার মানুষের ঘরের ভেতর থেকে পানি সরেনি। গোয়ালঘরে হাঁটুপানি। ভাসছে হাঁস-মুরগির খোয়াড়ও। এতে বাড়ির সামনে ও দূরের রাস্তাগুলোতে গরু-ছাগলের আশ্রয় মিলেছে। আবার অনেকেই সঙ্গে করে আশ্রয়ণকেন্দ্রে নিয়ে গেছে গবাদিপশু। যারা বাড়িতে আছে অধিকাংশ বাসিন্দাই খাট অথবা চৌকির এক কোণে ঝুড়িতে করে হাঁস-মুরগি রাখছে। অনেকে ভুলে গেছে শেষ কবে ঘরে মাটির চুলায় রান্না করেছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে দেওয়া শুকনো খাবার ছাড়া অনেকেই রান্না করা খাবার খেতে পারছে না বন্যার শুরু থেকেই। এ ছাড়া মানুষজন ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলে ভুলুয়া নদী এলাকায় টানা ২০ দিন বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি জমে মৃত ভুলুয়া থইথই করছে। বেড়িবাঁধের বাইরে লোকালয়ে প্রায় পাঁচ ফুট পানি। বৃষ্টি থামলেও কমছে না পানি। প্রভাবশালীদের দেওয়া অবৈধ বাঁধের কারণে প্রবাহ নেই ভুলুয়াতে। এতে ভুলুয়া নদীর পানি কোনো দিকে সরছে না। এমন অবস্থায় ভুলুয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে নোয়াখালীর বন্যার পানির চাপ আগে থেকেই বিপর্যস্ত রামগতি-কমলনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার সংকট বাড়িয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা দলবদ্ধ হয়ে ভুলুয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ বাঁধ অপসারণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। প্রভাবশালীদের সঙ্গে টিকে উঠতে পারছে না সাধারণ মানুষ। 

বাদামতলি এলাকার বৃদ্ধ ঈমান আলী বলেন, সত্তরের বন্যায় এতদিন পানি জমা ছিল না। এত পানিও ছিল না। ঘরে ১০ জন সদস্য। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে খুব বিপর্যয়ে আছি। মানুষ ত্রাণ দিচ্ছে। সেটিই এখন একমাত্র ভরসা। আগামী দুই মাসেও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।

চরবসু এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, আমাদের ত্রাণ না দিয়ে পানি কমার ব্যবস্থা করেন। পানি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। খামার, ফসলি ক্ষেত সব ডুবে আছে। কবে পানি কমবে, কবে আমরা স্বাভাবিক জীবনে যেতে পারব। ভুলুয়া নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণেই আমাদের এ দুরবস্থা। 

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস ছুটিতে থাকায় ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামছুদ্দিন মো. রেজা বলেন, কমলনগরে এখনও ১ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ১৬টি আশ্রয়ণকেন্দ্রে সাড়ে তিন হাজার মানুষ রয়েছে। বন্যার পানি কমানোর জন্য অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। বেয়াল জাল অপসারণ করেছি। অবৈধ বাঁধ অপসারণে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ইউএনও স্যার এলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আলোচনা করা হবে।

পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা জানাতে না পারলেও রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের ১৪টি আশ্রয়ণকেন্দ্র রয়েছে। ৪ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়ণকেন্দ্রে উঠেছিল। পানি কমতে শুরু করায় অনেকে বাড়ি চলে গেছে। এখন প্রায় ২৮০০ মানুষ আশ্রয়ণকেন্দ্রে রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, রামগতি ও কমলনগরে প্রায় তিন ফুট পানি কমেছে। পানিতে ডুবে থাকা গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোও জেগে উঠেছে। অধিকাংশ মানুষের ঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে বাড়ির উঠান-ক্ষেতসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও পানির নিচে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা