× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চেয়ারের ‘নেশা’ তারে ছাড়ে না

সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:১১ এএম

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১৫ এএম

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ। ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ। ফাইল ফটো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শুধু পদ নয়, দেশও ত্যাগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ক্ষমতাসীনদের মদদে বছরের পর বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলো আঁকড়ে থাকা ব্যক্তিরাও একে একে পদত্যাগ করেছেন। তবে তীব্র দাবির মুখেও যে গুটিকতক এখনও চেয়ার চেপে বসে আছেন তাদের অন্যতম চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ।

আওয়ামী লীগ সরকারের বদান্যতায় দফায় দফায় আটবার মেয়াদ বাড়ানো ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা নেই। গত ৫ আগস্টের পর অনেকেই স্বেচ্ছায় বিদায় নিলেও তিনি এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বেশ কয়েক দিন ধরে ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি, নিজ মেয়ের কর্মপ্রতিষ্ঠানকে কনসালটেন্ট নিয়োগ করে কোটি টাকা আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি করে অন্তত ১৩ জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়া, টাকার বিনিময়ে অপারেটর থেকে মিটার পরিদর্শক পদে উন্নীতকরণসহ নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন করছেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু চেয়ার ছাড়তে নারাজ এমডি ফজলুল্লাহ। 

এদিকে পদত্যাগের চাপ যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন নিজের আমলের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন ফজলুল্লাহ। সবখানে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন, তার আমলেই নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় পানি সরবরাহ বেড়েছে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছেÑ এখনও নগরীর কৈবল্যধাম, কাট্টলী, হালিশহর, আমবাগান, ফয়স লেক, পশ্চিম খুলশী, পতেঙ্গার বেশিরভাগ এলাকা, অক্সিজেন, ডিওএইচএস, ফিরোজ শাহ, শেরশাহ, আতুরার ডিপো, বালুচরা, খুলশী ১নং রোড, ডেবারপাড় বায়তুল আমান আবাসিক এলাকাগুলোর প্রায় প্রতিটি গলির শেষ মাথায় কোনো গ্রাহক এখনও পানির দেখা পায় না।

এদিকে গতকাল বুধবারও এমডি ফজলুল্লাহর পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ। এ অবস্থায় ওয়াসা ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অফিস করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বহিরাগত কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে গেটে দায়িত্বে থাকা নিরপত্তাকর্মীরা তাদের পরিচয় জানতে চাইছেন। গত মঙ্গলবারও এমডির পদত্যাগ দাবিতে সংগঠনটি বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী দলও অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। 

এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, চট্টগ্রামবাসীর জন্য আমাদের এই আন্দোলন। ১৫ বছর ধরে ওয়াসার এমডি পদে থেকে তিনি অনেক দুর্নীতি করেছেন। ওয়াসার প্রত্যেকটি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিজের পরিবারের অন্তত ২০ জনকে অবৈধভাবে ওয়াসায় চাকরি দিয়েছেন। নিজের ভাগনের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ করেছেন। স্বৈরসরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশের টাকা পাচার করেছেন। তাই তার পদত্যাগ দাবি করছি। 

এত দাবির পরও তিনি পদ ছাড়ছেন না কেন সে বিষয়ে নাজের হোসাইন মন্তব্য করেন, ‘এমডি আন্দোলনকারীদের জবাবে বলেছেনÑ উনি নাকি আরও পাঁচ বছর এই পদে থাকবেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দুই নেতাকে ম্যানেজ করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে এই দুর্নীতিবাজ এমডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এমডি তার অনেক আত্মীয়-স্বজনকে ওয়াসায় চাকরি দিয়েছেন। এর মধ্যে তার ভাগনে-জামাই সহকারী প্রকৌশলী আবু নোমান সিদ্দিকী, ভাতিজা উপসহকারী প্রকৌশলী ইমরান খান, ভাতিজি উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেরুননেছা পপি, কম্পিউটার অপারেটর ভাতিজা মোহাম্মদ আলী, ভাগনে হিসাবরক্ষক রওনক জাহান, নাতনি কম্পিউটার প্রোগ্রামার লুফি জাহান, নাতনি-জামাই সিস্টেম অ্যানালিস্ট শফিকুল বাসার, মিটার পরিদর্শক মামুনুর রশিদ, রাজস্ব তত্ত্বাবধায়ক আয়েশা হোসেন উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া মামুনুর রশিদ নামে এক পাম্প অপারেটরকে টাকার বিনিময়ে মিটার পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন এমডি। 

তারা আরও জানান, ওয়াসার এমডি নানা অনিয়ম করে অবৈধ টাকায় নাসিরাবাদ হাইজিংয়ে তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, খুলশীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে বাবা-মায়ের নামে ট্রাস্ট করেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার নিজস্ব জায়গায় তার যোগসাজশে কয়েজন কর্মচারী দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিস্টেম লসের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া নিম্নমানের মিটার ক্রয়ের কারণে গ্রাহকরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তবে এসব আন্দোলন, অভিযোগকে তোয়াক্কা না করে অভিযুক্ত একেএম ফজলুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার আমাকে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির চেয়ারে বসিয়েছে। আমি কোনো অন্যায় করিনি। সরকার যদি আমাকে চেলে যেতে বলে, কালই চলে যাব; কিন্তু নিজে থেকে যাওয়ার মতো কোনো অন্যায় কাজ আমি করিনি।

নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে এমডি ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াসায় যারা জয়েন করেছে তাদের সবাইকে পরীক্ষার মাধ্যমে ওয়াসা বোর্ড ও মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আর দুটি নয়; নাসিরাবাদে আমার একটি ফ্ল্যাট আছে।’

একেএম ফজলুল্লাহ উল্টো আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বলেন, ‘ক্যাবের নাজের সাহেব এখানে বোর্ড মেম্বার হতে চেয়েছিলেন। ওয়াসা থেকে ঠিকাদারি চেয়েছিলেন। কয়েকজনের চাকরি চেয়েছিলেন। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। সেই ক্ষোভ থেকে লোকজন নিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন।’

তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নাজের হোসাইন বলেন, এমডির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি, তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন।

একেএম ফজলুল্লাহ ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অবসরে যান। ২০০৯ সালের ৮ জুলাই তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে এক বছরের নিয়োগ নেন। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিশ্বস্ত হিসেবে গত ১৫ বছরে আটবার চুক্তি বাড়িয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বহাল রয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত এই ব্যক্তি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা