দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৪৪ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১৪ পিএম
দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণে সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ক্ষমতার
মাঝে যাওয়া জামায়াতের উদ্দেশ্য নয়, সমাজের একটা গুণগত পরিবর্তন আনা আমাদের উদ্দেশ্য,
তোমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য। এমন একটি দেশ, এমন
একটি জগৎ আমরা আমাদের এখানে চাইÑ যেই দেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ
শান্তিতে বসবাস করবেন। এ দেশের নাগরিক হিসেবে যেখানেই যাক, যে দেশেই যাকÑ গর্বের সঙ্গে
বলবে আমি বাংলাদেশি।’
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণে সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনতার এই
আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আবারও তা বাংলাদেশের ১৮
কোটি মানুষ রুখে দেবে। আমরা সেই আন্দোলনে মানুষের সঙ্গে থাকব, পাশে থাকব, অগ্রভাগে
থাকব, আমরা কথা দিচ্ছি।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘এখানে বিশেষ বিশেষ সময়ে কোনো ধর্ম-সম্প্রদায়ের
উপাসনালয়, বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আগামীকালের জন্য যারা জন্ম নেবে তারা
সকলেই, বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক।’
তিনি বলেন, ‘যারা শহীদ হয়েছে, তাদের বীরের মর্যাদা দেওয়া হবে। যাতে
শহীদদের পরিবার বলতে পারেন, আমাদেরও একজন শহীদ আছে। আমাদেরও একজন আবু সাঈদ আছে, আমাদেরও
একজন মুগ্ধ আছে, আমাদেরও একজন রুদ্রসেন আছে, আমাদেরও একজন রাহুল আছে।’
জামায়াতপ্রধান বলেন ‘যে দেশে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে,
সে দেশে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা হোক। যে দেশে মসজিদ পাহারার প্রয়োজন হয় না, সে
দেশে মন্দিরও পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক, যারা জন্মগ্রহণ
করবে তারাও এই দেশের নাগরিক। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলন করেনি। এই আন্দোলন
করতে গিয়ে দেশের সোনার সন্তানেরা শহীদ হয়েছে। বুকের তাজা রক্তে ভরে উঠেছে এই দেশের
রাজপথ। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে এই সফলতা যদি কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাহলে এই দেশের
১৮ কোটি মানুষ তা সহ্য করবে না। আপামর জনতার আন্দোলন কাজে লাগিয়ে যদি কোনো গোষ্ঠী সুফল
নিতে চায় তা হবে না। যদি কেউ এই আন্দোলনের সুফলকে ব্যবহার করতে চায় তাহলে দেশের ১৮
কোটি মানুষ তা রুখে দেবে।’
এর আগে জামায়াতের আমির শহীদ রুদ্র সেনের বাসভবনে গিয়ে তার স্বজনদের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি শহীদ রুদ্রের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের সহযোগিতার
আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দিনাজপুর উত্তর শাখার সভাপতি মো.
জাকিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ
মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক
সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক
মাহবুবুর রহমান বেলাল ও জাগপা কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান।
এর আগে জামায়াতের আমির হেলিকপ্টারযোগে দিনাজপুরে পৌঁছে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রুদ্র সেনের পাহাড়পুরের বাড়িতে যান। এ ছাড়া সমাবেশে আসা শহীদ পরিবারের
সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও প্রত্যেক শহীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দিনাজপুর জেলার ৭ জন শহীদ হন। তারা হলেন-দিনাজপুর
জেলা শহরের পাহাড়পুরের বাসিন্দা ও শাবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন, বিরল কবলা এলাকার বাসিন্দা
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. মাসুম রেজা, বিরলের নাগরবাড়ীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের
চাকরিজীবী আব্দুল কাফি, একই উপজেলার পাকুড়া এলাকার রিকশাচালক জয়নাল আবেদীন, দিনাজপুর
সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম
রাহুল, চিরিরবন্দর উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাসুদেবপুর গ্রামের পোশাকশ্রমিক মো. সুমন পাটোয়ারী
ও বীরগঞ্জের ডাবরা জিনেশ্বরী গ্রামের পোশাকশ্রমিক মো. সেলিম উদ্দিন।