কমলনগর-রামগতি
কমলনগর-রামগতি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩১ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৪ পিএম
বন্যার পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রবা ফটো
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে বন্যার পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। খাদ্য সংকটসহ নানা ভোগান্তির সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগবালাই। দূষিত পানিতে বাসিন্দারা ডায়রিয়া, খোসপাঁচড়াসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করায় তাদের পায়ের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ত্রাণ হিসেবে শুকনোসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পেলেও কেউ চর্মরোগের ওষুধ পাননি।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের আউলিয়ানগর এলাকার মো. বাবুল বলেন, ‘বন্যায় আমার ঘরের ভেতরে পানি উঠেছে। কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পানির কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড ব্যথা লাগছে। ঘরের কাদা-পানি পায়ে লাগতে লাগতে পায়ের নিচে ও আঙুলের ফাঁকে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
চরঠিকা গ্রামের বাসিন্দা সফিক উল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন বন্যার পানি জমে থাকায় তা দূষিত হয়ে পড়েছে। কোথাও পানি এক মাস ধরে আটকা, কোথাও ২০ থেকে ২৫ দিন। এসব পানি এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। পানি লাগলেই চুলকানি শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, এলাকায় প্রায় মানুষের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। কারও চুলকানি, কারও পায়ের তলা বা আঙুলের ফাঁকে ক্ষত। এ মুহূর্তে ত্রাণের পাশাপাশি চর্মরোগের ওষুধ প্রয়োজন। পানিবন্দি অনেকেই দূষিত পানি মাড়িয়ে দূর দূরান্তে গিয়ে ওষুধ আনতে পারেন না। আর্থিক সচ্ছলতাও নেই।
ফজুমিয়ারহাট এলাকার মো. সোহেল বলেন, ‘বাড়িতে কোমর পানি। সড়কে হাঁটুর উপরে। প্রতিদিন চার থেকে ছয়বার পানি মাড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এখন পুরো শরীর চুলকায়। পায়ের তলায় ক্ষত।
রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের মিরাজ হোসেন জানান, পায়ের তলায় মাংস খসে গিয়ে ছোট ছোট গর্ত হয়ে গেছে। তারপরও প্রতিদিন দূষিত পানি মাড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। বাড়িতে আমার স্ত্রীর ডায়রিরা দেখা দিয়েছে।
একই এলাকার নুরবানু বলেন, পানিতে নামতেই ইচ্ছে করে না। আঙুলের ফাঁকে ক্ষত হয়ে গেছে। পানি লাগলেই এখন জ্বলে। নতুন নতুন রোগ-বালাই দেখা দিয়েছে। খাবার কেনার টাকা নেই, ওষুধ কিনব কীভাবে? ত্রাণের সঙ্গে জ্বর বা ব্যথা কিংবা ওরস্যালাইন দেয়। কিন্তু অ্যালার্জির কোনো ওষুধ এখনো দেয়নি।
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মুরাদ বলেন, এ মুহূর্তে চারিদিকে পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে। লোকজনের ডায়রিয়া, চুলকানি, খোসপাঁচড়াসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এ জাতীয় রোগীরা আমার দোকানে এসে ওষুধ নিচ্ছেন। বন্যার পানি দূষিত হয়ে পড়ায় এমন রোগ শুরু হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী বলেন, আমাদের কয়কটি মেডিকেল টিম আছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল টিমের মাধ্যমে এবং স্বেচ্ছাসেবীরা টিম করে বন্যাকবলিত এলাকায় ক্যাম্পেইন করে চিকিৎসা দেওয়া হবে। একই মতামত জানান রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামনা শীষ মজুমদার।