আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৮ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৯ পিএম
ঢাকার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে ও নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক দাবি করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি, অসদাচরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মোহাম্মদ আজিজ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে প্রতারক আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্থানীয় শ্রীপুর এলাকার ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। এর আগে তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদুর রহমান।
গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আজিজ ঢাকার আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর তালটেকী এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে আজিজ ও তার সঙ্গী জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে শ্রীপুর বৃহত্তর পাইকারি কাঁচা বাজারে ভুক্তভোগী মানিক মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় তারা নিজেদের সাভার-আশুলিয়া এলাকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও গুলি আছে জানিয়ে তল্লাশি করতে চায়। এতে বাধা দিলে আজিজ ভুক্তভোগীকে গালিগালাজ ও হুমকিধমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় তল্লাশি করেন। বাসায় কোনও কিছু না পেয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চার দিনের সময় বেঁধে দেন আজিজ। এই সময়ে টাকা প্রদান না করলে ভুক্তভোগীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় আসামি করা হবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরে কোনও উপায় না পেয়ে বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের জানান ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই অভিযুক্ত আজিজকে ডেকে নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণ হলে আজিজকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগীর কাছে ইতোপূর্বেও প্রতারক আজিজের সহযোগী জাহাঙ্গীর খান হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় জাহাঙ্গীরকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জাতীয় নির্বাচনেও আজিজ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ জং এর একজন সক্রিয়কর্মী হিসাবে ঈগল মার্কার পোস্টার লাগানোর কাজ করেছেন। পোস্টার টানানো নিয়ে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের লোকজন তাকে বেধড়ক মারধর করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তবে তিনি সুযোগ বুঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে প্রতারণার পথ বেছে নেন। তিনি নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে আশুলিয়া থানায় যাতায়াত শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে একটি সমন্বয়কের তালিকাও প্রস্তুত করেন তিনি। ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে এলাকার বেশ কিছু মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মানিক মিয়া বলেন, আমাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য আজিজ নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে হুমকি দিয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডাকা হলে তার প্রতারণার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে প্রমাণিত হয়। পরে তাকে মারধর করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকে বলেন, আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকদিন আগে স্থানীয় বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা, সাধারণ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের নামে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আজিজ আমার কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এঘটনায় অভিযুক্ত আজিজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’