কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৯ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২২ পিএম
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বল্প মূল্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দলীয় বিবেচনায় ডিলারশিপ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরকার পতনের পর হামলা-মামলার ভয়ে এসব ডিলার আত্মগোপনে চলে গেছেন। এখন চাল উত্তোলন ও বিতরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকৃত ডিলারশিপ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কমিটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২০ হাজার ১৫৩ উপকারভোগীর স্বল্প মূল্যে চাল ক্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৪ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব ডিলারের অধিকাংশই নিয়োগ পায় দলীয় বিবেচনায়। ডিলারদের অনেকের বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কতিপয় ডিলারের বিরুদ্ধে চাল মজদু ও কালোবাজারে বিক্রি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করে খাদ্য অধিদপ্তর। খাদ্যবান্ধব কমিটি ও অফিস ম্যানেজ করেই ডিলারদের এ অনিয়ম, দুর্নীতি চলত বলে অভিযোগ।
একই চিত্র দেখা গেছে ওএমএস ডিলারদের কার্যক্রমেও। লাইনে দাঁড়িয়ে স্বল্প মূল্যে চাল, আটা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রভাবশালী এসব ডিলারের হাতে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে অনেককে। খাদ্য অধিদপ্তর এসব ঘটনার সত্যতা পেলেও ক্ষমতার দাপটের কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে বারবার। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এভাবেই রাতারাতি বিত্তবান হয়ে ওঠেন ডিলাররা।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রণীত জাতীয় খাদ্যনীতিতে খাদ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ নীতিমালা সংশোধন করে কার্যক্রম আরও সুসংহত করতে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়।
বালিয়াতলি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ আমলের দলীয় ডিলার দিয়ে এখন আর চাল বিতরণ করা চলবে না, স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি উপকারভোগী পরিবার ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন। সেপ্টেম্বর মাসে এ উপজেলায় ২০ হাজার ১৫৩ পরিবারের অনুকূলে ৬০৪ দশমিক ৫৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; যা ১২ ইউনিয়নের ৩৪ জন ডিলারের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে চারজনের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দুয়েকজন ডিলারের নামে মামলা হওয়ায় তারা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জেনেছি। সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায় নীতিমালা অনুসরণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
পদাধিকার বলে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। জানতে চাইলে ইউএনও রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ পেলে ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে।’