শাকিল মাহমুদ, বরিশাল
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৪ এএম
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৫৪ এএম
বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় বিক্রির জন্য আঁকা ছবি হাতে চারুকলা বরিশাল ফাইন আটর্স প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যার ভয়াবহ সব ছবি দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নিজের অজান্তে চোখ পানিতে টলমল হয়েছে। ব্যতিক্রম নন বরিশালের একদল শিক্ষার্থী। বন্যার্তদের দুরবস্থা দেখে তাদেরও মন কেঁদেছে। শিক্ষার্থী বলে তারা বসে থাকেননি, অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ববোধ থেকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ভিন্ন এক পথ বেছে নিয়েছেন। নিজেদের পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ তারা তুলে দিচ্ছেন প্রশাসনের হাতে।
বন্যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১১টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকজনের প্রাণহানির পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গত এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছবি এঁকে তা বিক্রি করছেন বরিশাল চারুকলার একদল শিল্পী।
জানা গেছে, চারুকলা বরিশাল নামে একটি ফাইন আর্টস প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিল্পী চলমান বন্যাদুর্গতদের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়ে নিজেরা ছবি এঁকে বাঁধাই করে তা বিক্রি করছেন।
বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে তারা ৩২ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
শিল্পীরা জানান, আমরা টিভিতে বন্যার ছবি দেখেছি, আর তা দেখেই প্যাস্টেল রঙ দিয়ে সেই রকম ছবি আমাদের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছি। আমাদের আঁকা ছবি অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিনছেন। এর আগে সিলেটে বন্যায় আমরা ছবি এঁকে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ত্রাণ তহবিলে দিয়েছি। মানুষের এই বিপদের দিনে আমরা শিল্পীরাও পাশে আছি।
ফাইন আর্টস শিল্পী তাপস কর্মকার জানান, বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন শিল্পী ৫০টি ছবি এঁকেছেন। এসব ছবিই আমরা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছি। আমাদের এই ছবি বিক্রির ক্যাম্পিং আরও কয়েকদিন চলবে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রথম পর্যায়ে কিছু টাকা পাঠিয়েছি।
চারুকলা বরিশালের সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী জানান, ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় শিল্পীদেরও করণীয় রয়েছে, এই মনোভাব সবার মধ্যে কাজ করছে। সে কারণেই দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিল্পীরা সবাই এগিয়ে এসেছে। সবাই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চায়; তাদের জন্য কিছু করতে চায়। এই অনুভূতি এগিয়ে নিতেই আমরা বন্যার্তদের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, শিল্পীরা তাদের আঁকা ছবি বিক্রি করে যে অর্থ বন্যার্তদের সহায়তায় দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন তা একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি এটিকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি আরও যে সকল সংগঠন রয়েছে তারাও যেন এভাবে এগিয়ে আসে। আমরা একে অপরের সাহায্যে এভাবেই এগিয়ে আসি এটাই বাংলাদেশের সৌন্দর্য। বরিশাল জেলায় আমরা বিভিন্ন সংগঠনকে দেখেছি তারা তাদের সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছে বানভাসিদের সহায়তায়। বিশেষ করে ত্রাণ সহায়তা থেকে শুরু করে এখন তাদের পুনর্বাসনের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমিও আমার মতো করে তাদের সহায়তা করছি এবং সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।