শরিয়ত উল্যাহ রিফাত, সোনাগাজী (ফেনী)
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৯:০৭ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৪৮ পিএম
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক পরিবারের বাড়ি। প্রবা ফটো
‘হঠাৎ করে যখন বন্যার পানি বাড়তে শুরু করে, পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নিয়া আসতে পারি নাই। পানি কমার খবর পাইয়া আসছি, এখন দেখি কিছুই আর নাই। সব পানি নিয়া গেছে। কেবল আমরাই বাঁইচা আসছি। কী কইমু, একেবারে নিঃস্ব হইয়া গেছি। ঘর, জিনিসপত্র সব ভাসাইয়া নিছে পানি। ঘরে যা ছিল তা পানিতে পইচা গেছে। পানি তো কমছে, কিন্তু আমার যে ক্ষতি অইল, তা তো কোনোভাবে পুষাইবো না।’ কথাগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে হাসিনা আক্তার। তার বাড়ি উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামে।
আকস্মিক বন্যায় ফেনীর সোনাগাজীতে ভেঙে পড়েছে অনেকের ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতঘরসহ বাড়ির আঙিনা। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব অনেকে।
সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখীল গ্রামের বাসিন্দা পঙ্কু রানী। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি বাড়ার পর পরিবারের লোকজন নিয়ে পাশের কালী মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরে পানি কমে যাওয়ায় আজ সকালে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে দেখি বসতঘর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
উপজেলার চরসাহাভিকারী গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম। বন্যায় তার ঘরটা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে ছিল তার সাজানো-গোছানো একটি বাড়ি। আকস্মিক বন্যায় কোনো কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি তিনি। পানি কমে গেলে বাড়ি ফিরে শুধু ধ্বংসস্তূপ দেখতে পান। ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দুশ্চিন্তা এখন তার মাথায়।
বন্যার আগে খামারে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি ছিল আহম্মদপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের। নিজের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা তিনি।
তিনি বলেন, ‘৩০ দিন বয়সি মুরগির ওজন প্রায় এক কেজি করে হয়েছিল, কয়েক দিন পরেই বাজারে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু বন্যায় সব মুরগি পানিতে মারা গেছে। পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্ব।’
আমিরাবাদ ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের জাফর আহম্মদ বলেন, ‘পরিবারের সবাইরে নিয়া পানিবন্দি দিন পার করেছি। পরে উদ্ধারকর্মীরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়া আসে। পানি নামার খবরে বাড়ি গিয়া দেখি ঢেউয়ে বাড়ির মাটির ওয়াল ভাইঙা গেছে। ধানের জমিতে এখনও দুই ফুট পানি। প্রায় পথে বসে যাচ্ছি। কী কইরা আবার ঘুইরা দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না। খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার আশ্রয়কেন্দ্রে ফিইরা যাইতে হবে। তা নাহলে না খাইয়া মরতে হইব।’
চরছান্দিয়া ইউনিয়নের শ্যামল দাস বলেন, ‘দাদারে কই থাকমু, কী খামু, কিছু নাই, সব শেষ। ঘরের সব নষ্ট হইয়া গেছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত মোশারফ মিয়া বলেন, ‘বন্যার পানিতে থাকার ঘরটা ভেঙে গেছে। এমনিতেই অভাবের সংসার। এখন ঘর ঠিক করতে অনেকগুলো টাকা লাগবে। কোথায় পাব এই টাকা।’
সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, আমিরাবাদ, মতিগঞ্জ, মঙ্গলকান্দি, মজলিশপুরসহ সব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রান্তিক মানুষেরা। কারও ঘরের পুরোটাই ধ্বংস হয়েছে, কারও আবার ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। কারও ঘরের জিনিসপত্র হারিয়ে ভেসে গেছে বানের তোড়ে। বিধ্বস্ত ঘরগুলো মেরামত নিয়ে দরিদ্র মানুষেরা পড়েছে বিপাকে।
তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এখন তাদের খাদ্য সহায়তা চলমান আছে। সরকারি সহায়তা পেলে পুনর্বাসনে সহায়তার কথা জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘আপাতত বন্যার ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসন ঠিক করতে সহযোগিতা করা হবে।’