ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৭:০০ পিএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩২ পিএম
চারদিকে বন্যার পানির কারণে রান্নাঘরে মায়ের কবর দেন সুকুমার। প্রবা ফটো
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব প্রিয়বালা বর্মন হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। গত ২১ আগস্ট বিকাল থেকে ভগবানপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করতে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রিয়বালাদের উঠানে পানি আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের পানিও বাড়তে থাকে। একসময় ঘরে কোমর সমান পানি হয়ে যায়। ঘরে প্রিয়বালার ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মন, তার স্ত্রী ও সন্তানরা আছেন। সুকুমার ও তার স্ত্রী ঘরের মধ্যে মাচা করে ভেজা কাপড়ে মাকে সেখানে বসিয়ে রাখেন।
এই অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে ছয় দিন থাকার পর প্রিয়বালা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের শরীর খুব খারাপ অবস্থার দিকে গেলে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সুকুমার একটি নৌকা ভাড়া করেন। তিনি ও তার স্ত্রী মিলে প্রিয়বালাকে নিয়ে বের হন হাসপাতালের উদ্দেশে। কিছু দূর যাওয়ার পর প্রিয়বালা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। চারদিকে পানি, শ্মশানে দাহ করার মতো অবস্থা নেই। উঠানে, ঘরে পানি। কোথাও সমাধিস্থ করারও কোনো উপায় নেই।
পেশায় দর্জি সুকুমার চন্দ্র বর্মন জানান, তার মাকে যখন রান্নাঘরের মেঝেতে দাফন করার জন্য মাটি খুঁড়ছিলেন তখন ওই কক্ষে পানি ছিল না। অন্য সব কক্ষে পায়ের পাতা অবধি পানি ছিল। কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকলে গর্তের মধ্যে পানি ওঠা শুরু করে। একদিকে তিনি মাটি খুঁড়ছিলেন আরেকদিকে স্ত্রী পানি সেচে ফেলছিলেন। কিছুটা গর্ত করার পর প্রিয়বালাকে যখন শোয়ানো হচ্ছিল তখন সেখানে পানি ঢুকে যাচ্ছিল। তারপরও কোনো রকমে তাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
সুকুমার আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘চারদিকে হানি, মা রে কই নিমু, কন্ডে দাহ করমু, কন্ডে কবর দিমু! একবার চিন্তা করচ্চি কলার ভেলায় ঘরের পাশের নদীতে ভাসায় দিমু, আবার চিন্তা কইচ্চা একমাত্র মা, কেন্নে ভাসামু নদীতে? হরে ঘরের ভিত্তে পাকের ঘরের মেঝের মাডি খুঁড়ি হানির ভিত্তে দাফন দিসি।’
(চারদিকে পানি, মাকে কোথায় নেব, কোথায় দাহ করব, কোথায় কবর দেব! মাথায় কিছুই আসছিল না। একবার ভেবেছি কলাগাছের ভেলায় ঘরের পাশের নদীতে ভাসিয়ে দেব, আবার চিন্তা করেছি একমাত্র মা, কেমনে নদীতে ভাসাব? পরে রান্নাঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে পানির মধ্যে দাফন করেছি।)
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সুকুমার বলেন, ঘরের পানি কমলেও উঠানে এখনও হাঁটুপানি। মায়ের এমন শেষ পরিণতি হবে তিনি কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি।
আশ্রয়কেন্দ্রে মারা গেলেন বানভাসি
বন্যা শুরুর পর ২১ আগস্ট রাতে বাড়ি ছেড়ে দাগনভূঞার বিরলী বাজার আব্দুস সাত্তার মার্কেটের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন অটোরিকশার চালক ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেম। পানিতে ডুবেছে ঘর, নষ্ট হয়েছে উপার্জনের একমাত্র অটোরিকশাটিও। এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আবুল কাসেম দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর কাজী বাড়ির দেলুমিয়ার ছেলে।
স্থানীয় মো. শাহজালাল জানান, আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে। এ অবস্থায় পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে রাতে সিন্দুরপুর বাজারের অলাতলী গ্রামের একটি উঁচু স্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় আবুল কাশেমের দুই ছেলেসহ আশপাশের লোকজন উপস্থিত ছিল।