শরিয়ত উল্যাহ রিফাত, সোনাগাজী (ফেনী)
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৭:০০ পিএম
বন্যাকবলিত ফেনীর সোনাগাজীতে ধীরে ধীরে পানি কমছে। প্রবা ফটো
বন্যাকবলিত ফেনীর সোনাগাজীতে ধীরে ধীরে পানি কমছে। নিম্নাঞ্চল ছাড়া বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। এ মুহূর্তে শুকনো খাবারের পরিবর্তে রান্না করে খাবার উপযোগী (চাল, ডাল, আলু, তেল) ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসিদের ভোগান্তি এখনও কমেনি। বন্যায় প্লাবিত সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, আমিরাবাদ, মজলিশপুর, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের কিছু কিছু গ্রামে এখনও পানি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও অনেক এলাকার পানিবন্দি মানুষ তেমন কোনো খাবার পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু কিছু এলাকায় একাধিকবার ত্রাণ পেলেও প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় একবারও ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। তারা বলছে, ত্রাণ বিতরণকারীরা প্রত্যন্ত এলাকায় না গিয়ে দফায় দফায় সড়কের পাশের এলাকার মানুষদের মাঝে ত্রাণ দিচ্ছেন।
নবাবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখনও নাজিরপুর, গুয়ালিয়া, ভোরবাজারের কিছু কিছু অংশে বুক ও হাঁটুপানি আছে। কয়েক হাজার মানুষ বাজারের ভবনগুলোতে আটকে আছে। তাদের কাছে তেমন কোনো খাবার ও পানি পৌঁছেনি।’
মজলিশপুর ইউনিয়নের রিয়াদ হোসেন বলেন, তাদের এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো খাবার ও সুপেয় পানি পৌঁছেনি। একই কথা জানান আমিরাবাদের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। বলেন, সমাজের শতাধিক পরিবার খাদ্য ও পানির সংকটে রয়েছে।
চরদরবেশ ও চরছান্দিয়া ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আল মামুনসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকায় বন্যার পানি বাড়ার পর শুকনো খাবার প্রায় সকলেই পেয়েছে। এ মুহূর্তে পানি কমার পর আমাদের শুকনো খাবারের আর প্রয়োজন নেই। দরকার রান্না করে খাওয়ার উপযোগী খাবার।
মতিগঞ্জের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, বন্যা শুরুর পর থেকে আমরা আমাদের গ্রামের এক হাজারেরও অধিক মানুষের মাঝে প্রতি বেলা রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসছি। এখন পানি কমে গেলেও অনেক জায়গাতে রান্না করে খাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাই পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
এদিকে সোনাগাজীর একাধিক স্বেচ্ছাসেবক অভিযোগ করে বলেন, বাইর থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে চাইলেও অনেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ত্রাণগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় বিতরণ করে। আমরা বর্তমানে প্রশাসনের সহয়তায় যেসব অঞ্চলের মানুষ ত্রাণবঞ্চিত ছিল সেসব অঞ্চলেই ত্রাণ বিতরণ করছি।
সোনাগাজী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বলাই মিত্র বলেন, যেসব এলাকায় বন্যার পানি কমে গেছে সেসব এলাকায় লাইন চেক করে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ত্রুটিপূর্ণ লাইন ঠিক করে তারপরই লাইন দেওয়া হচ্ছে। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমাদের লোকজন বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন বলেন, আমাদের সাধ্যমতো সব এলাকায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। দুর্গম এলাকাগুলোর দিকে অতিরিক্ত নজর দিচ্ছি। যেখানেই খাদ্য সংকটের খবর পাচ্ছি সেখানেই সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সমন্বয় করে বিতরণ করছি। বন্যার শুরুর দিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে কিছুটা সমন্বয়হীনতা হলেও এখন ধীরে ধীরে তা কমে গিয়ে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে।