ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৯:২২ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ২০:৩৪ পিএম
বন্যার পানি বাড়তে দেখে মাদ্রাসা থেকে ছেলেকে আনতে গিয়েছিলেন বাবা। ছেলেকে নিয়ে ফেরার পথে পানির প্রবল স্রোতের মুখে পড়েন। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ধরে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ছেলেকে কোনোরকমে রক্ষা করতে পারলেও বানের জলে ভেসে যান নিজে। পরে ছেলেকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও নিখোঁজ হন বাবা। অবশেষে সেই বাবার লাশ উদ্ধার হয়েছে।
মৃত ৫৫ বছর বয়সি রজি আহমেদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কবিরা পাড়ার বাসিন্দা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, শুক্রবার রাতে স্থানীয়রা রজি আহমেদের লাশ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ব ভূজপুর গ্রামে ছেলেকে বাঁচিয়ে ভেসে যান রজি। তার ২ ছেলে এবং ৪ মেয়ে রয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় মারকাজুল উলুম আল ইসলামি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. নাইমুল ইসলাম একটি বৈদ্যুতিক পিলার ধরে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করছে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায় ‘বাবা ভেসে গেছে।’
আজ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এজহার মিয়া বলেন ‘রজি আহমেদের বড় ছেলে নাঈম স্থানীয় একটা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। হালদার পানি গ্রামে প্রবেশ করায় মাদ্রাসা থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পথে হালদার শাখা খালের পানি পার হওয়ার সময় ভেসে যান বাবা-ছেলে। এ সময় ছেলে একটি বৈদ্যুতিক পিলার আকড়ে ধরে টিকে থাকলেও ভেসে যান রজি। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে তার মরদেহ মিলেছে। শনিবার দুপুরে দাফন করা হয়।’
রজি আহমেদের ছেলে নাইমুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাবাসহ আমি বন্যার পানির স্রোতের মধ্যে পড়ে যাই। তখন বাবা আমাকে জোরে ধরে একটি পিলারে ধরিয়ে দেয়। আমি ধরে রাখতে পারলেও বাবাকে ভাসিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর ওইদিক দিয়ে যাওয়া কিছু মানুষ দেখতে পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে।’
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গত ২১ আগস্ট রাত থেকে বন্যার পানি বাড়তে থাকে। ২২ আগস্ট হালদা নদীর কয়েকটি অংশে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। তবে শুক্রবার রাত থেকে পানি নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।