রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৫৮ পিএম
জলাবদ্ধ পতিত জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন রুবেল মিয়া। বুধবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা এলাকা। প্রবা ফটো
বর্ষা মৌসুমে সবজি তেমন চাষ হয় না। এ সময় সবজির চাহিদা থাকে বেশি। নিচে পানি আর উপরে মাচায় ঝুলছে লাউ। জলাবদ্ধ পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রুবেল মিয়া। ইউটিউব দেখে পরিত্যক্ত ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করা সবজি লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা তার।
সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া। তিনি এবার ২০ শতাংশ জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান লাউ চাষ করেছেন। সেখানে বাঁশের মাচায় ঝুলছে লাউ। কীটনাশক, রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি চাষ করছেন তিনি। অন্য জমির তুলনায় বিষমুক্ত এই সবজির ফলনও হয়েছে ভালো।
রুবেল মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে তেমন সবজি চাষ হয় না; তাই পতিত জমিতে ভাসমান লাউ চাষ করছি। ভাসমান সবজি চাষে পরিচর্যা ছাড়া তেমন পরিশ্রম নেই। ২০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও এক লাখ টাকার বেশি আয় হবে আশা করছি। পরিত্যক্ত ডোবা, জলাশয় বা অনাবাদি জমিতে ভাসমান বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
ভাসমান পদ্ধতি বেছে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ইউটিউব দেখে ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ চাষ করা শিখেছি। আমাদের এই অঞ্চলের জমি দীর্ঘ চার মাস পানির নিচে থাকে। তাই এখানকার হাজার হাজার একর জমি পতিত থেকে যায়। এ নিয়ে মাথায় চিন্তা আসে, কীভাবে জমিটা কাজে লাগানো যায়। পরে ইউটিউবে দেখি, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে রুবেল মিয়া বলেন, বস্তার মধ্যে মাটি দিয়ে পানির ওপর মাচা তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করি। মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছি। এবার পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো এসেছে, গাছ নষ্ট হওয়া বা পানির জন্য মরে যাওয়া এমন কিছু হয়নি। সামনে বেশি করে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করব। এলাকার কৃষকরাও এই পদ্ধতি দেখতে ভিড় করছেন। তারাও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে আগ্রহী। এই পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে একদিন কোটিপতি হতে পারব।
ভাসমান লাউ চাষ দেখতে আসা দিদারুল আলী বলেন, এই প্রথম ভাসমান পদ্ধতিতে যে সবজি চাষ হয় তা দেখলাম। এটা দেখে আমিসহ এলাকার অন্য কৃষকরা আনন্দিত। যেসব জমি এতদিন পড়ে ছিল, সেগুলোতে এখন চাষ করতে পারব। এর মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে।
আরেক কৃষক নাজমুল মিয়া বলেন, এই মৌসুমে ৪ মাস আর জমি ফেলে রাখব না। রুবেলের কাছে পরামর্শ নিয়ে লাউ চাষ করব। বজলু মিয়া নামে আরেকজন বলেন, বর্ষার মৌসুমে কাজকাম নেই। বেকার হয়ে বসে আছি। রুবেলে নতুন পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে আনন্দিত। ফেলে রাখা জমিতে সবজি চাষ করব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ হতো। ঠাকুরগাঁওয়ে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এই প্রথম সদর উপজেলায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেছেন রুবেল। কৃষি বিভাগ তাকে সব সময় সঠিক পরামর্শ দেবে। আরও কৃষক যাতে জলাশয় বা পানির ওপর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী হন; সে বিষয়েও কাজ করা হবে।