কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩১ পিএম
কমলগহ্জে বন্যার পানিতে বালুতে চাপা পড়েছে কৃষকের পাকা-আধাপাকা ধান। শুক্রবার ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল এলাকায়। প্রবা ফটো
‘ধারদেনা করে ধান চাষ করেছি, এখন তা পরিশোধ করব কী করে- সে চিন্তায় আছি। বন্যার পানিতে ভেসে আসা বালুতে আধাপাকা ধান চাপা পড়েছে। কয়েক দিন পরই জমির ধান পেকে যেত। জমিতে এবার ফলনও ভালো ছিল। কিন্তু বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল। এখন নতুন করে জমি ঠিকঠাক করে চাষাবাদের মতো টাকাও নেই। এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল এলাকার কৃষক দুরুদ মিয়া। একই দুর্দশার কথা জানান ওই এলাকার তাহের আলীসহ একাধিক কৃষক। ধলাই নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকার কৃষকরা।
শুধু মোকাবিল নয়, ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৪টি স্থানে বালি ও পলিমাটির স্তূপ জমেছে। স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ সংস্কার করে ফসলি জমির বালুর স্তর অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ধীরগতিতে কমতে শুরু করে কমলগঞ্জের ধলাই নদের পানি। এতে কমলগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নসহ প্লাবিত বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নামলেও আদমপুর, আলীনগর, শমসেরনগর,পতনঊষার ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এর আগে গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদ ফুলেফেঁপে ওঠে। মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা নিমজ্জিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় পুরো উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার পানি কমতেই বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষত। বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চা-বাগান এলাকায় অসংখ্য কাঁচা বসতঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিতেও বড় ক্ষতি হয়েছে এই বন্যায়। বানের জলে ভেসে আসা বালুতে চাপা পড়েছে মাঠের পাকা/আধাপাকা ধানের ক্ষেত। এ ছাড়া পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমনের আবাদও।
কমলগঞ্জে প্রথম বন্যাকবলিত হয়েছিল ইসলামপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নের মোকাবিল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বানের পানির সঙ্গে প্রচুর বালু এসেছে। বালুতে চাপা পড়ে আছে আউশের ক্ষেত। কোথাও পাকা আবার কোথাও আধাপাকা ধানের শীষের অংশ বেরিয়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বন্যার পানিতে কী পরিমাণ জমিতে বালুচাপা পড়েছে, তার সঠিক হিসাব নেই। হিসাব করতে আরও দুয়েক দিন সময় লাগবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘বন্যার পানিতে উপজেলায় এক হাজার হেক্টরের বেশি আমন ও আউশ ধানের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।’