রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম
শুক্রবার রাতে চিকিৎসায় অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্বজনরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করে। প্রবা ফটো
রংপুর নগরীতে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে আটক করে পুলিশ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে নগরীর বাংলাদেশ বেতার সংলগ্ন রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতাল চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এনআইসিইউতে (নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট) নবজাতকদের চিকিৎসার নামে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যও করে আসছিল হাসপাতালটি।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জের আশিকুর রহমানের স্ত্রী সাথী বেগম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জমজ বাচ্চা প্রসব করেন। জন্মের পর নবজাতকদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকরা এনআইসিইউতে চিকিৎসার কথা জানান। সরকারি এ হাসপাতালে এনআইসিইউ সংকট থাকায় তারা দালালের মাধ্যমে গত ২১ আগস্ট রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতি সেবা হাসপাতাল নবজাতকদের ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার চিকিৎসক জানান মেয়ে নবজাতক দূর্বল হলেও ছেলে নবজাতক ভাল রয়েছে। শুক্রবার সকালে ছেলে নবজাতককে কেবিনে মায়ের কাছে দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য আশিকুর সকাল থেকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ছেলের খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নবজাতককে এনআইসিইউ থেকে কেবিনে দেওয়ার পরিবর্ততে আশিকুরকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে আশিকুর তার নবজাতককে কাছে পেতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয় এবং থানা-পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার কথা জানায়। এরপর সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে তার ছেলে নবজাতক মারা গেছে। তবে কন্যা নবজাতক এখনও জীবিত রয়েছে। এ খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে আশিকুরের পরিবার। রাত ১০টার দিকে চিকিৎসায় অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্বজনরা হাসপাতালে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা হাসপাতালে আসলে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।
এ সময় ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। নবজাতক শিশুদের চিকিৎসা দেন নার্স ও আয়া। এছাড়াও একাধিক রোগীকে ভূল প্রেসক্রিপশন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। এদিকে শুক্রবার সকালে হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রংপুর ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার, ববিতা রানী, জবা রানী’র নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তারা সকালে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে একটু দূর্বল থাকলেও ছেলে নবজাতক সবল ছিল। এখানে কোন চিকিৎসা নেই। তাই মেয়েকে বাঁচাতে তাকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
বগুড়া থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ইমরুল কায়েস বলেন, আমার নবজাতকের শ্বাসের সমস্যা রয়েছে। জানতে পারলাম এ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয়। কিন্তু বাচ্চা ভর্তির পর থেকে দেখি ডাক্তার ঠিকমত আসে না। ডিউটি ডাক্তারও থাকে না। মোট কথা চিকিৎসার কোন পরিবেশ নেই। এনআইসিইউতে নবজাতককে রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।
পঞ্চগড় থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহিদুল্লাহ বলেন, এখানকার ডাক্তাররা আমাকে ভূল প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছিল। আমি সেই অনুযায়ী ঔষধ নিয়ে এসে তাদের দিয়েছি। পরে আমি ওই ডাক্তাদের জিজ্ঞাসা করি বাচ্চার চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন ঠিক ছিল কি না। পরে তারা জানায় প্রেসক্রিপশন ভূল হয়েছে ঔষধগুলো দোকানে ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। এমন অনিয়ম চলছে এখানে।
হাসপাতালের অনিয়ম অস্বীকার করে সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার রয়েছে এবং সকল রোগী চিকিৎসা পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন নবজাতক এনআইসিইউতে মারা গেছে। তাদের শারীরিক সমস্যা ছিল।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সরদার বলেন, শুক্রবার রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, রংপুর নগরীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে অভিযান চলছে।