কুমিল্লার বুড়িচং
কুমিল্লা ও বুড়িচং প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১২:৫২ পিএম
গোমতীর বাঁধ ভেঙে আশ্রয়হীন দুই লক্ষাধিক মানুষ। প্রবা ফটো
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে বুড়িচং উপজেলার সঙ্গে আদর্শ সদর উপজেলার একাংশ, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুড়িচং উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬০ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার। ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী কয়েকটি গ্রামে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভাঙা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকা সংলগ্ন বাঁধে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নারী, পুরুষ ও শিশুরা অবস্থান নিয়েছে। অনেকে তাদের গবাদিপশু নিয়ে এসেছে। কেউ ভবনের ছাদে রেখে এসেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুকনো খাবার বিতরণ করলেও বিশুদ্ধ পানি এবং শৌচাগারের সংকট রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় বুড়বুড়িয়া গ্রাম সংলগ্ন গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ভোর হওয়ার আগেই নানুয়ারবাজার, ইন্দ্রভূতি, শিবরামপুর, গোপিনাথপুর, বেড়াজাল, শিকারপুর, মিথিলাপুর, খাড়াতাইয়া, গাজীপুর, নোয়াপাড়া, রামনগর, পূর্বহুরা, কাহেতরা, বালিখাড়া, কামারখাড়া, শিমাইলখাড়া, কোসাইয়াম, ভান্তি, ভরাসার, গোবিন্দপুর, ইছাপুরা, সদর রাসুলপুরসহ প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় পানি থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন স্থানের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন উঁচু বাড়িঘরে আশ্রয় নিতে ছুটে যায়। বিগত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল বুড়িচং উপজেলার একাধিক স্থানের গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। এতে পূর্ব থেকেই অনেকে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে নেয়।
বুড়বুড়িয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া জানান, বাড়িঘর ডুবে গেছে। পরিবারের লোকজন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। পানি কবে নামবে, নামলেও বাড়িঘরে আগের মতো অবস্থা থাকবে কি না জানি না।
মিথিলাপুরের হুমায়ুন কবির বলেন, তিনটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বাড়িতে পানি উঠেছে। পরিবারের লোকজন মসজিদের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে। বাজেহুড়ার চন্দনা রানী জানান, বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। মানুষ শুকনো খাবার দিচ্ছে। খাবার পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে।
বুড়িচংয়ে গোমতীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ যখন আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছিল তখন গতকাল সকাল থেকেই সেনাবাহিনী, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জেলার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসার কয়েকশ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুর্গতদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ায়। এ সময় তারা দুর্গতদের খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, শুকনো খাবার, খিচুড়ি বিতরণ করে। ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কালি নারায়ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পীর যাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু সরকারি কলেজ, ফকিরবাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পারুয়ারা কলেজ, ছয়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও ছয়গ্রাম আলীম মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনকালে দুর্গতদের মাঝে বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অনেকটিতে ক্ষতিগ্রস্তরা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ছাগল নিয়ে এলেও পশুখাদ্যের অভাব ছিল তীব্র।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, বুড়িচংসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। উদ্ধার কার্যক্রমে উপজেলা প্রশাসন সমন্বয় করছে। সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিদা আক্তার জানান, ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত। আশ্রিত ও বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ৫টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।