মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৫:১৯ পিএম
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সতেজ হয়ে উঠেছে রোপা আমন। পীরগাছা উপজেলার স্বচাষ গ্রামে ধান ক্ষেতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক ইমরান। প্রবা ফটো
অনুকূল আবহাওয়ায় এ বছর রংপুরে আমন আবাদে স্বস্তি ফিরেছে। সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই কৃষকের। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে সতেজ হয়েছে ধানক্ষেত। সরকারের কাছে সার, বীজ, কীটনাশকের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রির সুযোগ চেয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, রংপুরের পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের স্বচাষ গ্রামে দিগন্তজুড়ে আমনের ক্ষেত। দৃষ্টিসীমায় সবুজের বিছানায় আমনের সতেজ চারা। প্রতিটি ক্ষেতে পায়ের পাতা ভেজানোর মতো পানি। বাড়ন্ত আমন গাছের খাদ্যের জোগান দিতে কৃষক ইমরান, আইয়ুব আলী, আব্দুল মালেকসহ অন্যরা ইউরিয়া, ফসফেট সার মিশিয়ে ক্ষেতে ছেটাচ্ছিলেন। এর মধ্যে কৃষক আব্দুল মালেক প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। শুরুতে একবার সেচ দিয়ে চারা লাগিয়েছিলেন। এরপর বৃষ্টির কারণে আর সেচ দিতে হয়নি। বরং কিছু সময় জমির আইল কেটে বাড়তি পানি বের করে দিতে হয়েছে। বৃষ্টির পানির কারণে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে আমনের চারা।
আব্দুল মালেক বলেন, গেল বছর ৮ থ্যাকি ১০ বার আমনের ক্ষ্যাতোত পানি দেওয়া লাগছে। এইবার ধান গাড়ার টাইমে একবার পানি দিছি। দুই-এক দিন পর বৃষ্টি হইতোছে। এইজন্তে পানি দেওয়া লাগে নাই। আমনের ক্ষ্যাতও ভালো আছে। আশা করতোছি ফলনও ভালো হইবে। স্যারের দাম একটু বাড়তি হইছে। সরকার যেন সার, ঔষধের দাম কন্ট্রোল করে। একই গ্রামের ইমরান মিয়া বলেন, আমনের চারা এবার ভালো আছে। এখন কীটনাশক আর সার দিচ্ছি। ক্ষেতে পানি থাকার কারণে গাছ সতেজ ও দ্রুত বাড়ছে। এমন আবহাওয়া থাকলে ভালো ফলন হবে।
আমির উদ্দিন নামে আরেকজন কৃষক বলেন, দেশের যা অবস্থা। আমরা চেষ্টা করতেছি সুন্দরভাবে আবাদ করার জন্য। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই, সার, বীজ, কীটনাশক ও পরামর্শ চাই। যেন সুন্দরভাবে ফসল তুলতে পারি। এতে করে আমরা বাঁচব, দেশও বাঁচবে। দেশের পরিস্থিতি খারাপের কারণে কিছু কিছু সারে বস্তাপ্রতি দেড় থেকে দুইশ টাকা বৃদ্ধি করেছে দোকানিরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ইতোমধ্যে শতভাগ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আমন আবাদ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলায় তিস্তা নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কিছু ইউনিয়ন বন্যাপ্রবণ হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় আমন ক্ষেতের ক্ষতি হলে পুনরায় রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন কৃষক। এ বছর কৃষকদের বাড়তি সেচ দিতে হয়নি। তাই কৃষকরা আমনে বেশি লাভ করতে পারবেন বলে আশা কৃষি বিভাগের।
জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, এ বছর আমনের অবস্থা খুবই ভালো। অনুকূল পরিবেশের কারণে জেলার ৮ উপজেলাতেই ভালো ফলনের আশা করছি। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।