মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ১১:০৪ এএম
গণনা চলছে পাগলা মসজিদের দানবাক্সের টাকা। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১০টি সিন্দুক তিন মাস ২৭ দিন পর খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এসব বস্তা থেকে ৮ কোটি টাকার বেশি পাওযা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৮টায় সিন্দুক খুলে শুরু হয় গণনার কাজ।
এবার প্রথম সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম, লে. কর্নেল রিয়াজুল করিম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদসহ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়।
টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ মাদ্রাসার ১৪৫ জন ছাত্র, ঐতিহ্যবাহী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার ১১৩ জন ছাত্রসহ ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। এ ছাড়া মসজিদ কমিটির ১৫ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটির অবস্থান। মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করে থাকেন।
পাগলা মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের তিন মাস পর পর দানসিন্দুকগুলো খোলা হলেও এবার নানা কারণে তিন মাস ২৭ দিন পর খোলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার দানের অর্থ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে।
আজ শনিবার সকাল ৮টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় লোহার সিন্দুক থেকে বের করে আনা হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। আছে সোনাদানাসহ বিদেশি মুদ্রাও। বস্তায় ভরে এসব টাকা নেওয়া হয় মসজিদের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে চলছে গণনার কাজ। সকাল ৯টায় শুরু হয় টাকা গণনা।
জানা গেছে, সিন্দুক খুললে প্রতিবারেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায় এবং প্রতিবারেই দানের অর্থ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২০ এপ্রিল দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া পাওয়া যায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে , ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে নয়টি দানবাক্স থাকলেও দানের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও একটি অস্থায়ী দানসিন্দুক বাড়ানো হয়েছে।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এ ছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে দানখয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।
মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি আরও জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। সেখানে ২২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এবার দানের টাকা রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮ কোটিরও বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, পাগলা মসজিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েন আছে। তা ছাড়া এবার সেনা সদস্যরাও রয়েছেন। আজ টাকা গণনায় বাড়তি পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।
সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমত জানান, সকাল সোয়া ১০টায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা গণনা হয়ে গেছে। গণনার সময় চার দফায় সব টাকা জমা করা হবে রূপালী ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ শাখায়।