রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ২০:১৫ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ২১:৩৮ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবা ফটো
জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন মন্তব্য করে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে। সব জায়গায় নাগরিক কমিটি গঠন করে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে একসঙ্গে রয়েছে। সেখানে যেন কেউ সুযোগ নিতে না পারে। প্রতিহিংসা, প্রতিঘাত নয়, ভালোবাসা-প্রেম দিয়ে সকলকে একত্রিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালীন ইউনিয়নের জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখনও বিপদ কাটেনি। সেই বিপদকে মোকাবিলার জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে পরিষ্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। ভয়াবহ, জালিম, হত্যাকারী, খুনি সরকার পালিয়ে গেছে, তাদের পতন হয়েছে। কিন্তু তাদের প্রেতাত্মা এখনও দেশে আছে। আমি পরিষ্কার দাবি করছি, যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্বে বিচার করতে হবে। হাসিনার দ্রুত বিচার করতে হবে। হাসিনার মন্ত্রীরা যারা চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরাজিত শক্তিকে নির্মূল করে দেব। গণতন্ত্রকে আমরা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করব।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশকে পুনর্গঠনের কাজ করছেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করব। যেসব ছাত্ররা অসাধ্যকে সাধন করেছে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। আমাদের অনেক নেতা কারাগারে রয়েছেন, তাদের মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে রয়েছেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘লক্ষ লক্ষ জনতার চাপে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে চক্রান্ত করছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমরা সম্প্রীতি সমাবেশ করছি। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসঙ্গে মিলে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তা সুসংহত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়মী লীগ ভেবেছিল তাদের কোনোদিন ক্ষমতা থেকে যেতে হবে না। হাসিনা খুব বড় বড় গলায় বলেছিলেন, আমি কোনো দিন পালাব না। আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমি পালাই না। পরে লেজ গুটিয়ে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। আরেক ভদ্রলোক (ওবায়দুল কাদের) এখন কোথায়? তিনি বারবার বলতেন- আমি পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুলের বাড়িতে গিয়ে উঠব। উনি কোথায় কেউ জানে না। আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনি আমার বাসায় আসেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদের বাসায় গিয়েছিলাম। তার বাবা বোবা হয়ে গেছেন। মাও কথা বলতে পারেন না। একটা মেধাবী ছেলেকে কীভাবে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। আবু সাঈদ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, পুলিশ একের পর এক গুলি করে তাকে হত্যা করেছে। কী নিষ্ঠুর, কী নির্মম! সারা দেশে অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা এইসব বীরদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের নিয়ে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।