সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪ ১১:১২ এএম
কিশোরগঞ্জ জেলা জুড়ে দেয়ালে দেয়ালে নানা রঙের আলপনা আর দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ জেলা জুড়ে নানা রঙের আলপনা আর দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি। বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালগুলোতে যেখানে আগে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা ও বিভিন্ন পোস্টারে ছেয়ে ছিল, আর এখন সেই দেয়ালগুলোতে শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলির আঁচড় পড়েছে। সেগুলো এখন নতুন রূপে সেজেছে। আর এ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
‘মহা কালের সাক্ষী হলো বাংলাদেশর নাম যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে বিজয় নিয়ে এলাম’ মেধার বিজয় বিকল্প কে? আমি তুমি আমরা’ ‘পানি লাগবে পানি?’ ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করব’ এমন নানান প্রতিবাদী শোভা পাচ্ছে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে।
রবিবার (১১ জুলাই) দুপুরে জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মুক্ত মঞ্চ শিশু পার্ক এলাকায় ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের দেয়ালগুলোতে বিজয় উল্লাসের বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়। দিনভর এসব দেয়ালে গ্রাফিতির কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ছাত্র-জনতার বিজয়ের বিভিন্ন প্রতীকী ছবিও আঁকা হয়।
সরেজমিনে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র আন্দোলনের পর সারা দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে দেয়াল সাজাতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতের তুলিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। কালো, সাদা, লাল, নীল, হলুদ-এ যেন রঙের এক মেলা! দেখা গেল, কেউ রঙ লাগাচ্ছে, কেউ পানি ছিটাচ্ছে- এ যেন এক মিলন মেলা! প্রতিটি মুখে যেন ফুটে উঠছে এক অনাবিল আনন্দ।
রোদের মধ্যেই যেন একটা মায়া লুকিয়ে আছে। কারও হাতে রঙের তুলি, কারও হাতে পানির বোতল- এ যেন এক স্বপ্নের রূপ! সবাই মিলে যেন একটা নতুন স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রতিটি ক্যালিগ্রাফির আঁচড়ে যেন ফুটে উঠছে এক নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা। এ সময় বিভিন্ন বয়সী ছেলে–মেয়েরা দেয়ালে লিখনে অংশ নেয়।
ইভা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জানান, রাজনৈতিক পোস্টার, বিজ্ঞাপন কিংবা দেয়াল লিখনের বদলে তাদের সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটছে দেয়ালগুলোর প্রতিটি ইঞ্চিতে। শহরবাসীও এই পরিবর্তনে মুগ্ধ। তাদের মতে, এ যেন এক নতুন সূচনা, যেখানে শিক্ষার্থীদের কর্মপ্রবণতা এবং সৃষ্টিশীলতা নতুন আশার সঞ্চার করছে।
তাসনিয়া আক্তার তিন্নি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কলেজের সামনের দেয়ালসহ কলেজের জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এসব পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করে সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়াল লিখন চলছে।’
হিমেল মিয়া নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘আগে যেসব দেয়াল রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত হতো, এখন সেগুলো পরিণত হয়েছে দেয়ালে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এগিয়ে এসে দেয়ালে যোগ করেছেন শিল্পের ছোঁয়া।’
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মুক্ত মঞ্চের শিশু পার্কে বিভিন্ন দেয়ালে রং তুলিতে দেয়াল লিখন করছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। লামিয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন চিত্র, উক্তি, ছবি আঁকা হচ্ছে।
শরিফুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দেওয়ালগুলো এতদিন অযত্নে-অবহেলায় ছিলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগানে পরিপূর্ণ ছিল। আমরা আজ ক্যালিওগ্রাফিতি করে পুরো দেওয়ালগুলো সাজিয়েছি। পথচারীরা অনেক প্রশংসা করছেন। এখন দেখতেও অনেক সুন্দর লাগছে। এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছি এজন্য আমি গর্বিত।’