মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১১ পিএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১৪ পিএম
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও পাঁচ একরের খেলার মাঠ দখলমুক্ত করছে বিদ্যালয়টির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে শহরের আলোরমেলা এলাকায় অবস্থিত ছাত্রাবাসটি বিয়াম ল্যাবরেটরি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কাছ থেকে দখলমুক্ত করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়টির বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররা বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে আলোচনায় বসেন। ওই সভায় সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আলোরমেলা এলাকায় গিয়ে বিয়াম ল্যাবরেটরি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ড খুলে ছাত্রাবাসের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর বিয়াম স্কুলের তালা ভেঙে ছাত্ররা নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। তারপর ছাত্রাবাসের বিল্ডিংয়ে বিয়াম ল্যাবরেটরি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল লেখাটা রঙ দিয়ে মুছে দেয় ছাত্ররা।
এদিকে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সাইনবোর্ড খুলে ফেলার সময় সেনাবাহিনীর একটি টিম সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রাবাসের ব্যানার ঝোলাতে না দিলে শিক্ষার্থীরা অনশনে যাওয়ার কথা জানায়। এ পরিস্থিতিতে সেনাসদস্যরা তাদের দ্রুত ছাত্রাবাসের সাইনবোর্ড ঝোলানোর পরামর্শ দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়া আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ছাত্রাবাসের জায়গা, মাঠ, পুকুর ও স্থাপনা বিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ১৫ নভেম্বর শহরের আলোরমেলা এলাকায় সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের দুটি ভবন মাসিক ১২ হাজার টাকায় দুই বছরের জন্য নিয়ে বিয়াম ল্যাবরেটরি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল চালু করা হয়।
ছাত্রাবাসের পাশাপাশি বিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি বালক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, পুকুর এবং স্টাফ কোয়ার্টারও ভোগ করছে। কিন্তু ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব স্থাপনা এবং সম্পদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেয়নি। বিয়াম স্কুলের কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও তারা দখল ছাড়েনি। এ নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও সংশ্লিষ্টরা তাতে কর্ণপাত করেননি।
এদিকে জেলা প্রশাসন খেলার মাঠের আরএস ও মাঠ রেকর্ড সংশোধনী চেয়ে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিবাদী করে মামলাও করে।
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের সংগঠক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইফতেখারুল আলম পারভেজ বলেন, ২০০৬ সালে এক বছরের ভাড়ার চুক্তিতে বিয়াম ফাউন্ডেশন অযৌক্তিকভাবে ভাড়া নেয়, কিন্তু আজ অবধি তারা কোনো ভাড়া দেয়নি। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও বিয়াম ফাউন্ডেশন আমাদের ছাত্রাবাসটি ছাড়েনি। দীর্ঘদিন দখল থাকার পর কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ও পুকুর বিয়াম ফাউন্ডেশনের কবল থেকে আজ উদ্ধার করল স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররা।
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪০০ ছাত্র রয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ছাত্রাবাসে থাকার মতো ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ৫০০। বারবার চেষ্টা করার পরও ছাত্রাবাসটি আমরা ফিরে পাইনি। ছাত্ররা আকস্মিকভাবে এই কাজটি করেছে। এতে আমি অভিভূত। কারণ আমার ছাত্ররা এখন থেকে এই ছাত্রাবাসে থাকতে পারবে। বিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে পারছি না।’
এদিকে বিদ্যালয়ের হাজার হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ১০০ কোটি টাকা মূল্যের বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও বিশাল মাঠ ও পুকুরটি দখলমুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মন্তব্য করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। পরে কথা বলব।