নরসিংদী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪ ২২:০০ পিএম
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪ ২২:১৯ পিএম
নরসিংদী কারাগারে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র, গুলি লুট, ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ জন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কারাগারের পাঁচ কর্মকর্তাসহ ৮২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ ও জেলার কামরুল ইসলামকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ৭৭ জন কারারক্ষীকে কারা অধিদপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে নরসিংদী কারাগারে সদ্য যোগ দেওয়া জেলার আবু ইউসুফ বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫৯২ জন কয়েদি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
নরসিংদী জেলা কারাগারের জেলার আবু ইউসুফ জানান, নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সময় দায়িত্বে নিয়োজিত জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার, দুজন সুবেদারসহ পাঁচ কর্মকর্তা এবং প্রধান কারারক্ষী তিনজন, প্রধান সহকারী কারারক্ষী ছয়জন, কারারক্ষী ৬৩ জন, মহিলা পাঁচজনসহ মোট ৭৭ জন কারারক্ষীসহ মোট ৮২ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
নরসিংদী কোর্ট ইন্সপেক্টর (ওসি) ওদেদুজ্জামান বলেন, ‘নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে পাওয়া ৮২৬ জন কয়েদির মধ্যে বুধবার পর্যন্ত নুরুল আলম নামে এক জঙ্গিসহ ৫৯২ জন কয়েদি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।’
এদিকে নরসিংদী কোর্টের আইনজীবী তারিক বলেন, ‘নুরুল আলম সকালে এসে কোর্টে হাজির হয়ে আমাকে খুঁজতে থাকে। তার এই মামলায় এর আগে কয়েকবার জামিন শুনানি চেয়েছি আমি, আদালত জামিন মঞ্জুর করেনি। গেল ১৯ জুলাই জেলা কারাগার থেকে বন্দি পলায়নের ঘটনায় সে-ও পলায়ন করে। সে আদালতে আত্মসমর্পণে এলে জানতে পারি পুলিশ তার ভাইকে আটক করেছে। পুলিশ তার জন্য তার ভাইকে আটক করার ঘটনা সে মানতে পারেনি। তাই সে আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জঙ্গি নুরুল আলম গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে জেলহাজতে ছিল। ১৯ জুলাই জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিলে সে কারাগার থেকে পালিয়ে যায়।’
পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ জন বন্দির মধ্যে ৯ জন ছিলেন জঙ্গি। তাদের মধ্যে সিটিটিসির হাতে খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা ও ইসরাত জাহান ওরফে মৌ ওরফে মৌসুমী, র্যাবের হাতে ফারুক আহম্মেদ এবং নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে জুয়েল ভূঁইয়া গ্রেপ্তার এবং নুরুল আলম নামে একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। ৯ জঙ্গির মধ্যে এখনও পলাতক চার জঙ্গি হলেন, হিজবুল্লাহ মিয়া, আবদুল্লাহ কামরুল, মো. মহিউদ্দীন ও আবদুল আলীম। এই চারজনও আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনে ভর করে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে ৯ জন জঙ্গিসহ ৮২৬ আসামির সবাইকেই ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি, খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি লুট করা হয় জেলখানার সব ধরনের আসবাবপত্রসহ যাবতীয় মালামাল। ঘটনার পর তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কারা কর্তৃপক্ষ ও নরসিংদী জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫টি অস্ত্রের মধ্যে ৪৯টি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামসুল আরেফীন।