চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৮:১৬ পিএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪ ১৩:০১ পিএম
ন্যায়বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বুধবার চট্টগ্রামের আদালত ভবন এলাকায় সড়ক দখল করে বিক্ষোভ করেন। ছবি : নিপুল কুমার দে
চট্টগ্রামে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও আদালত চত্বরে ন্যায়বিচার ও বন্দি শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন তারা। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিলেও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা শিক্ষার্থীদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিন সকাল ১০টার পর থেকে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে জহুর হকার্স মার্কেটের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য আদালত ভবনের চারপাশ সকাল থেকেই ঘিরে রাখে। শুরুতে আদালত ভবনের সামনে থেকে ছয় ছাত্রীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তিনজনকে ছাড়িয়ে নিলেও বাকি তিনজনকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে জহুর হকার্স মার্কেটের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে তারা কিছুটা পাশে সরে গিয়ে জেলা পরিষদ চত্বরের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে পুরো সড়কে গাড়িচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আদালত চত্বরে সকাল থেকেই কোনো গাড়ি ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জেলা পরিষদ চত্বর থেকে আদালত ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেড দিলে সেই ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা আদালত ভবন চত্বরের দিকে যেতে থাকেন। এ সময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা তাদের সমর্থন দেন। আইনজীবীদের একটি দল আদালতপাড়া থেকে স্লোগান দিতে দিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা হবে মুখে, হাতে নয়। আমি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, এখানে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে না।’
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের পর পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এবং আটক শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে সমন্বয়কদের দেখা না গেলেও আজকের এ কর্মসূচিতে দুই সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফিকে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার আশ্বাস দেন। পরে আটক শিক্ষার্থীদের আবার আদালত প্রাঙ্গণে আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে।
আদালত ভবনের মাঝামাঝি এনেক্স আইনজীবী ভবনের সামনে পৌঁছার পর পুলিশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে হট্টগোল চলে। এ সময় জেলা পিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এরপরই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আদালত ভবনের চত্বরে যান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও বিকেল চারটা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেন। এরপর আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা।