মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ২০:৫৫ পিএম
ফরিদপুরের মধুখালীতে মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত গড়াই সেতুর টোল আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এ কারণে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর ওই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর ও যশোরের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে ১৯৯১ সালে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর-মাগুরার সীমান্তবর্তী মধুমতী নদীর ওপর গড়াই সেতু (কামারখালী ব্রিজ নামে পরিচিত) নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া এলাকায় অবস্থিত টোলঘরে সেতুটির টোল নেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকে প্রায় ৩১ বছর ধরে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করে থাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৩০ জুন ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন ইজারাদার দেওয়ার জন্য দরপত্র প্রকাশ করে। কিন্তু যথাসময়ে কোনো ইজারাদার দরপত্র দাখিল না করায় ১ জুলাই থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেরাই যানবাহন থেকে টোল আদায় শুরু করে।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গড়াই সেতু টোলঘর থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে মাগুরা ভায়া রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সড়কের প্রবেশদ্বার মধুখালীর গরিয়াদহ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল সেতু পার হয়ে ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করছে। যানবাহনের মধ্যে মাইক্রোবাস ৭৫ টাকা, প্রাইভেটকার ৪০ টাকা, নসিমন-করিমন থেকে ৩০ টাকা ও মোটরসাইকেল থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। বালিয়াকান্দি সড়কের গরিয়াদহ থেকে যারা টোল আদায় করছে তাদের দাবি, ইজারাদার থাকতে তারাই টোল আদায় করত।
ইজারাদার না থাকায় তারা যে টাকা প্রতিদিন উত্তোলন করে তা কয়েকজন ভাগ করে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অনুমোদন ছাড়াই কেন টোল নিচ্ছেনÑ জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন নামের অবৈধ টোল আদায়কারী এক ব্যক্তি বলেন, সড়ক বিভাগের সঙ্গে কথা বলেই মানবিক কারণে টাকা তুলছেন।
টোল দেওয়া প্রাইভেটকারচালক মো. শাহিন বলেন, ‘রাস্তা সংক্ষেপ করার জন্য গরিয়াদহ মোড় হয়ে বেনাপোল থেকে বালিয়াকান্দিতে যাচ্ছি। এখানে টোল বাবদ ৪০ টাকা নেওয়া হলেও কোনো রসিদ দেওয়া হয়নি।’ রাজবাড়ী থেকে মাগুরায় যাওয়া প্রাইভেটকারচালক আলিরাজ জিহাদ বলেন, ‘টোল তো এখানে না। তার পরও এখানে স্থানীয়রা টোল আদায় করছে। এর আগে একবার টোলের জন্য রসিদ দিয়েছিল। কিন্তু এবার কোনো রসিদ দেয়নি তারা। এটা বন্ধ করা উচিত।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্থানীয় আড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. বদরুজ্জামান বাবুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে ওদের টোল নিতে বলা হয়েছে। সড়ক বিভাগের সঙ্গে কথা বলেই এটা করা হচ্ছে। গরিব মানুষ। ওদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই টোলের টাকা নিয়ে তারা সংসার চালাচ্ছে। তবে এটা আইনসংগত নয়।’
খবর নিয়ে দেখা গেছে, গড়াই সেতুর মূল টোল আদায়ের ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেওয়া হয় না কোনো রসিদ। মাইক্রোবাস ড্রাইভার ওসমান বলেন, ‘স্থানীয় গাড়ি ব্রিজ পার হতে গেলে নেওয়া হয় ৫০ টাকা। দেওয়া হয় না কোনো রসিদ।’ অনেকে টোলকে ঘিরে চাঁদাবাজির আখড়া উল্লেখ করে বলে, সরকারের এদিকে কঠোর নজরদারি করা উচিত।
গড়াই সেতুর মূল টোল আদায় ঘরে দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফ হোসেন জানান, ‘সেতুর টোল একমাত্র আমরাই নিতে পারব। অন্য কেউ এখান থেকে টোল আদায় করতে পারবে না। রসিদ ছাড়া টোল আদায়ের কোনো বিধি নেই। প্রভাশালীরা গরিয়াদহ মোড় থেকে টোল নিচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানও জড়িত আছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। দ্রুতই অবৈধ টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’