কোটা সংস্কার আন্দোলন
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৯:২৯ পিএম
ফাইল ফটো
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অবরোধ-হরতালে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে যশোরের অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা পচনশীল পণ্য পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব দিয়েছেন। যেখানে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল বুধবার ৬ দিনে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অবরোধ থাকায় যশোরের পাঁচ খাতে ৬৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে যশোর বেনাপোল কাস্টমসে ছয় দিনে বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। আর এসব বাণিজ্য থেকে রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা। যশোর অভয়নগর নওয়াপাড়া বন্দর নগরীতেও ব্যবসায়িক কার্যাবলি বন্ধ থাকায় একই সময়ের মধ্যে ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কয়েক দিনের সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যশোরের বেনাপোল বন্দর, নোয়াপাড়া নৌবন্দর থেকে কোনো মালামাল লোড-আনলোড হয়নি। আন্দোলনকারীরা যশোর-বেনাপোল, যশোর-খুলনা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে পাহারা বসিয়েছিলেন। ফলে এই অঞ্চলে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
যশোর অটোমোবাইল এসপায়ার পার্টসের বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়েছে ৬ দিনে ২৪ কোটি টাকা। যশোরের দুই হাজারের অধিক ব্যবসায়ী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ খাতে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
যশোর গদখালী বাজারে ফুল ব্যবসায়ীদের ও কৃষকদের একই সময়ের মধ্যে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ফুলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর ফুল উৎপাদন ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম।
যশোর মৎস্য হ্যাচারি উৎপাদন ও বিপণন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম গোলদার বলেন, বাংলাদেশের সব থেকে বড় মৎস্য উৎপাদনকারী স্থান যশোরের চাঁচড়া। এখানে পাঁচ হাজারের অধিক লোক মৎস্য উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। গত ছয় দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অবরোধে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ খাতে অন্তত ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বেনাপোল পরিবহন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আজিমউদ্দিন গাজী বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর থেকে সাড়ে ৩০০-এর বেশি ট্রাক মালামাল নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অবরোধের কারণে বেনাপোল বন্দরে এসব ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে আটকে পড়ে। এসব পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানায় কাঁচামাল, গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল, জরুরি অক্সিজেন ও পচনশীল বিভিন্ন ধরনের পণ্য ছিল। এর ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ট্রান্সপোর্ট খাতে ৬ দিনে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্দরজুড়ে দেখা দিয়েছিল ভয়াবহ পণ্যজট। অবরোধের কারণে ভারতীয় পণ্য খালাস নিতে না পারায় বাড়তি ট্রাক ভাড়াসহ ব্যাংকঋণের কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, অবরোধে বন্দর গুদাম থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য লোড-আনলোড হয়নি। এর ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিম বলেন, এক দিন কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে প্রায় শতকোটি টাকার ব্যাবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়ে থাকে। এ থেকে সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়। তাই প্রত্যেকের উচিত দেশ ও মানুষের স্বার্থে আন্দোলনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা।