মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩০ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪১ পিএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ক্যারেট। আশপাশ থেকে তা পর্যবেক্ষণ করছেন বিদশীরা। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
আমের ফলন এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে কম হয়েছে। এর ফলে রপ্তানিতেও ধস নেমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরের চেয়ে এবার সবচেয়ে কম আম পাঠানো হয়েছে বিদেশে। আসছে বছর ফলন ভালো হলে রপ্তানিতে অতীত রেকর্ড ভাঙবে, আশা করছেন বাগানিরা। অন্যদিকে কৃষি অফিস জানাচ্ছে, এখনও এবারের রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশে আম রপ্তানি হয় ১৩২ দশমিক ৫৬৯ মেট্রিক টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা উন্নীত হয় ৩৭৬ টনে। তবে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আম রপ্তানি হয়েছে ১২৪ দশমিক ৭৩ টন। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আম রপ্তানির রেকর্ড পাওয়া যায়নি এ দপ্তরে।
এবারের আমের মৌসুমে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ক্ষীরশাপাতি আম ৬৩ দশমিক ৭ টন, ল্যাংড়া দশমিক ৫০ টন, হাঁড়িভাঙ্গা ১ দশমিক ১, আম্রপালি ৫৪ দশমিক শূন্য ২, কহিতুর (বোম্বাই) দশমিক ৪১, ফজলি ৩, ব্যানানা ম্যাংগো ২ মেট্রিক টন। এসব আম গেছে যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশে।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের অবস্থা
প্রসঙ্গত, বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকার ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন’ প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলাসহ দেশের আরও ৪৩টিতে বাগানিরা আম উৎপাদন করছেন। সরকারি অর্থায়নে তালিকাভুক্ত আমবাগানিদের প্রশিক্ষণ, বালাইনাশক, রাসায়নিক, ফ্রুট ব্যাগিংসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। যাতে কৃষকরা উত্তম কৃষিচর্যা (গ্যাপ) পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করতে পারেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচলিত জাতসহ আরও অনেক রকমের আম উৎপাদন হয়। কিন্তু উত্তম কৃষিচর্যায় উৎপাদিত না হওয়ায় অনেক সময়ই তা বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয় না। সরকার তাই বাগানিদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে আম উৎপাদন করে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আমের উৎপাদন বেশি হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হতে হচ্ছে চাষিদের। এ কারণে বাগানের পুরোনো গাছ কেটে ফেলেন তারা। কারণ নিজস্ব পদ্ধতিতে নিরাপদ আম উৎপাদন করেও চাষিরা রপ্তানি করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েন। এমন প্রেক্ষাপটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রপ্তানিতে নিশ্চয়তা দিতে ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে চাষিদের সঙ্গে।
রপ্তানি কম হওয়ার নানা কারণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানিয়েছেন, বিদেশে এবার আম রপ্তানি কম হওয়ার দুটি কারণ। তার মতে, প্রথমত. বাংলাদেশ থেকে বিদেশে আম পাঠানোর কার্গো ভাড়া অনেক। তাই অনেক বাগানিই রপ্তানি করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। দ্বিতীয়ত. এবার দাম অনেক বেশি হওয়ায় বিদেশে ক্রেতারা আম নেয়নি। এই দুই কারণে চলতি মৌসুমে আম রপ্তানি খুবই কম হচ্ছে।
ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভের ইসমাইল খান শামীম বলেন, রপ্তানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্গো ভাড়া। তিনি বলেন, ‘গত বছর বিদেশে আম পাঠাতে কার্গো ভাড়া ছিল প্রতি কেজিতে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা; এবার হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া অনেক আমদানিকারক ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবার আম রপ্তানি কম। আগামী বছর আমের জন্য ভালো ফলনের বছর। আশা করছি, আগামি বছর আম রপ্তানি বাড়বে।
এবার আম রপ্তানিতে হোঁচটের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার। তার মতে, ‘এখনও সময় আছে আম রপ্তানির। একেবারেই সময় শেষ হয়নি।’