ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪২ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৭:৩১ পিএম
ছেলের সঙ্গে আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু। ফাইল ফটো
চারদিন অজ্ঞান থাকার পর ঢাকার আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবু বকর ছিদ্দিক শিবলু। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের সময় আবদুল্লাহপুর রেলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে মারা যায় শিবলু। পরদিন বিকালে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরেন বড় ভাই আবদুল হাকিম বাবলু, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রিমাসহ স্বজনরা। ওইদিন রাতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে শিবলুর গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ চাঁনপুর এলাকার ওছি উদ্দিন ভূঞা বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় এলিট পেইন্টের সহকারী হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন শিবলু। প্রায় চার বছর ধরে উত্তরা আট নম্বর সেক্টর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। দুই শিশু সন্তানের একজন ফারহান ছিদ্দিক ও একজন দশ মাস বয়সি নুসাইবা ছিদ্দিক।
শিবলুর বড় ভাই আবদুল হাকিম বাবলু ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাড়ির সামনে বসেই কথা হয় তার সঙ্গে। প্রথমেই তার মোবাইল ফোনে থাকা একটি ছবি দেখালেন। প্রথম ছবিতে রয়েছে ছেলে ফারহানের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পাঞ্জাবি পরা হাস্যোজ্জ্বল শিবলু। আরেকটিতে রয়েছে কফিনবন্দি। মাথার পাশে কানের ওপর বিদ্ধ গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
শিবলুর স্ত্রী রিমার উদ্বৃতি দিয়ে বাবলু বলেন, ঘটনার দিন গত ২১ জুলাই রবিবার বিকালে ছেলে ফারহানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় শিবলু। সেখানে আবদুল্লাহপুর রেলগেটে হাঁটাহাঁটির পর দুজনে বসা ছিল। তখন গোলযোগ শুরু হলে বাসায় যেতে ছেলেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালে শিবলুর মাথার বামপাশে গুলি লাগে। আশপাশের লোকজন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসক আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠান। রিমার কাছ থেকে খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে যাই। ভাইকে বাঁচাতে তার শরীরে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।
বাবলু বলেন, মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ততক্ষণে ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটু একটু করে শিবলুর আঙুল নড়ে উঠায় সবার মধ্যে আশা জেগে উঠে। বুধবার সন্ধ্যার পর সেই নড়াচড়াও থেমে যায়। একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাবলু আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিবলুর আর জ্ঞান ফেরেনি। এ কারণে তার কাছ থেকে কোনো কিছুই জানতে পারিনি। ওইদিন পূর্ব উত্তরা থানায় সংঘর্ষ হলেও অপরপ্রান্তে দক্ষিণখান থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় শিবলু। উভয় থানায় শরণাপন্ন হয়েও কেউ মামলা নেয়নি। ফলে পোস্টমর্টেম ছাড়াই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একমাত্র ভাইটিকে দাফন করা হয়।
ইয়াকুবপুর ইউপি মেম্বার জয়নাল আবদীন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শিবলুর লাশ গ্রামের বাড়ি আনা হয়। সেখানে স্বজনদের আর্তনাদে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাত ১০টায় বাড়ির সামনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।