× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্দোলনকারীরাই দায়ী

আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে এজাহারে ভিন্ন বক্তব্য পুলিশের

রংপুর অফিস

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৬:২৪ পিএম

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ২১:৫২ পিএম

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। ছবি : সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। ছবি : সংগৃহীত

এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলন যাদের মৃত্যু ঘিরে জোরদার হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। হতদরিদ্র পরিবারের এই সন্তান পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শুক্রবার উল্লেখ করেছেন। অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাঈদের মৃত্যু নিয়ে রংপুর পুলিশ দিয়েছে দায়সারা এজাহার। মামলার এজাহারে সাঈদের মৃত্যুর জন্য আন্দোলনকারীদেরই অনেকটা দায়ী করা হয়েছে।  নিজেদের দোষ ঢাকতে পুলিশ এই কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করলে সঠিক বিচার মিলবে না। এক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) শনিবার বলেন, ‘পুলিশ ওই দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ছররা গুলি করেছে। যদি কেউ ১৫ থেকে ২০ গজের ভেতরে থাকে, তবে ছররা গুলি তার শরীরে বসন্ত গুটির মতো আঘাত হানবে। তবে মারা যাবে না। ১৬ জুলাই পুলিশ আবু সাঈদের থেকে প্রায় ৭০ গজ দূরে ছিল। তাই পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। আবু সাঈদের মাথার পেছনে একটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি।’

গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। সতীর্থদের ওপর যাতে আর হামলা না হয় সেই আহ্বান জানিয়ে এক পর্যায়ে মারমুখী পুলিশের সামনে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ওই দিনের ভিডিওতে আরও দেখা হয়, খুব কাছ থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হচ্ছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়া সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সাঈদের মৃত্যু আবেগ তাড়িত করে দেশের কোটি কোটি মানুষকে। বিষয়টি ছুঁয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। সেদিন আন্দোলনকারীদের তাণ্ডবলীলা তুলে ধরার পাশাপাশি সাঈদের মৃত্যু নিয়ে প্রথমবার কথা বলেন তিনি। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার একটি বক্তব্যে বলেছেন, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তার বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধারে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। হ্যাঁ পুলিশের গুলিতে একজন মারা গেছে। যেই মারা যাক, সে তো বাবা-মার সন্তান। আমরা সেজন্য সত্যিই দুঃখ প্রকাশ করি এবং তার বাড়ি রংপুর পীরগঞ্জ থানায়। আমরা তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।’

সাঈদের মৃত্যুর একদিন পরই অর্থ্যাৎ গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় এসংক্রান্ত মামলার এজাহার দাখিল করেন। এজাহারে  উল্লেখ করা হয়, ‘আন্দোলনরত দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও…..সরকারী ইস্যুকৃত শটগান থেকে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন সহপাঠীরা তাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য বেলা ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ আবু সাঈদ একাই থামাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। হাত তুলে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ নিরস্ত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার পুরো শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। এখন পুলিশ মামলায় আন্দোলনকারীদের দায়ী করে  নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমরান বাদশা, শিহাব প্রধান, ফুয়াদ হাসান, জান্নাত সৃষ্টি জানান, পুলিশ প্রকাশ্যে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেছে। যা গোটা দেশবাসী দেখেছে ও জানে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট মামলা হয়নি। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াসহ লাশ বাড়িতে নেওয়া পর্যন্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ‘আমি আবু সাঈদের হাত, বুক, পিঠ, মুখসহ শরীরের শতাধিক স্থানে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। সাঈদের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের লুকোচুরির ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশের সেই সদস্যদের কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা জনগণ জানতে চায়।’

আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ১৮ জুলাই বেরোবি উপাচার্যের নির্দেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানকে আহ্বায়ক, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানকে সদস্য সচিব ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিজয় মোহনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু মৃত্যুর ১১ দিনেও কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে গণবিজ্ঞপ্তির প্রয়োজন হতে পারে। প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। সবকিছু মিলে দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন তৈরিতে আমরা কাজ করছি।’

অপরদিকে ১৭ জুলাই একই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সায়ফুজ্জামান ফারুকীকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। সেই কমিটি এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সায়ফুজ্জামান ফারুকী বলেন, ‘আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় যেই দোষী হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তের কাজ শেষের দিকে। রবিবার (আজ) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

মানবাধিকার কর্মীরা যা বলছেন 

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মামলায় পুলিশ বাদী এবং তদন্ত করলে ভুক্তভোগী পরিবার সঠিক বিচার পাবে না বলে মনে করছেন না মানবাধিকার কর্মীরা। এক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি। সেই তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সত্য উদ্ঘাটন করবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে এ প্রত্যাশা করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা