ময়মনসিংহ আর্চ স্টিল সেতু
শফিক সরকার, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৫:২২ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৫:৫৪ পিএম
ময়মনসিংহ আর্চ স্টিল সেতুর নির্মাণকাজ চলমান। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল সেতু। গত ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে পাইলিংয়ের কাজ। সেতুর উত্তর-পূর্ব অংশে সংযোগ সড়ক সোজা না নিয়ে বাঁকা করে নেওয়ায় সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি ব্যয় বাড়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন, দুর্ঘটনারোধে সংযোগ সড়ক বাঁকানো হয়েছে। এছাড়া টোল প্লাজা সংলগ্ন অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলনেও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে, হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষজন বলে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন হাজার ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী রেলসেতু ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে আর্চ স্টিল সেতু। ২০২৫ সালের জুনে সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা বাইপাস থেকে শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুর উত্তর-পূর্ব অংশের নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সংযোগ সড়কটি প্রথমে শম্ভুগঞ্জ তিন রাস্তার মোড় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন নকশায় টোল প্লাজা সংলগ্ন থেকে চায়না মোড় হয়ে বাঁকা করে নেওয়া হচ্ছে মুটকিভাঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত। এতে ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি সেতুর সৌন্দর্য নষ্ট হবে। একটি মহলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য এমনটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
চায়না মোড় এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়ক প্রথমে শম্ভুগঞ্জ বাজারের তিন রাস্তা মোড়ে গিয়ে মিলিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন নকশায় সেতুটি ঘনবসতি এলাকায় হয়ে টোল প্লাজা সংলগ্ন থেকে চায়না মোড়, সেখান থেকে মুটকিভাঙ্গা ব্রিজের অগ্রভাগ ঝাওগড়া স্কুলের সামনে গিয়ে শেষ হবে। এতে অধিগ্রহণে অধিক খরচ ও সেতুটি বাঁকা হওয়ায় সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। সরকারের প্রায় কয়েকশ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা হাউজিং প্রকল্পে জড়িত প্রভাবশালীরা এর সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আশা রাখছি, কতৃর্পক্ষ বিষয়টি নজরে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
স্থানীয় ট্রাকচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উত্তর-পূর্ব অংশে সেতুর অ্যানিমেটেড ভিডিওতে দেখেছি সংযোগ সড়কটি বাঁকা হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়বে। কারণ বাঁকা রোডে গাড়ি টার্ন নেওয়ার সময় দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সড়কটি সোজা হলে দেখতেও ভালো হতো, দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কম থাকত।
টোল প্লাজা সংলগ্ন অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলনেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষজন। দেলোয়ার হোসেন সৌরভ নামে একজন বলেন, অধিগ্রহণে ৫১ শতাংশ জায়গা পড়ছে। টাকা তুলতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজপত্রের নানা সমস্যার কথা বলে ১০ পার্সেন্ট টাকা চাচ্ছে এলএ অফিসের লোকজন। ৬ পার্সেন্ট টাকা সরকার আগেই কেটে নিয়েছে; কিন্তু আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত তাহলে ক্ষতি পোষাব কীভাবে। জমির শ্রেণি সমস্যা হলে সংশোধনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। শুধু এলএ অফিস নয় একাউন্টস অফিসেও মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয়। হয়রানির কারণে এখনও পর্যন্ত টাকা তুলি নাই।
সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দিদারুল আলম বলেন, আর্চ স্টিল সেতু ময়মনসিংহবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহার। সেতুটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি নিয়োগ করলে তারা চারটি অ্যালাইনমেন্ট প্রস্তুত করে। চারটি অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে সবচেয়ে যেটি কম ব্যয় সেটি তারা আমাদের সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ডিজাইন করা হয়। সেতুটি রেললাইনের ৮ পয়েন্ট ৫ মিটার ওপর দিয়ে যাবে, এতে ঝুঁকিমুক্ত যান চলাচলে যতটুকু দূরত্ব রাখা দরকার সেটি শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত নাই। সরাসরি শম্ভুগঞ্জে সেতুর সংযোগ দিলে স্লোফ বেড়ে যেত এবং দুর্ঘটনা ঘটত। তাই যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বাঁকা করে চায়না মোড়, সেখান থেকে মুটকিভাঙ্গা ব্রিজের অগ্রভাগ ঝাওগড়া স্কুলের সামনে মিলিত করা হয়েছে। এতে অন্য কোনো কারণ নেই। সবার সহযোগিতায় আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।
বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, আর্চ স্টিল সেতু নির্মাণ এ অঞলের মানুষের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। সেটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সেখানকার মানুষ তাদের জমি অধিগ্রহণের টাকা তুলতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার পাশাপাশি এলএ অফিসের লোকজনকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছেÑ সে বিষয়ে আমিও অবগত রয়েছি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।