ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:২২ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প। ছবি : সংগৃহীত
কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী পাহাড়ি জনপদ জ্যৈষ্ঠপুরা। ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় ওপর গড়ে উঠছে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত হবে ছয় কোটি লিটার পানি। উৎপাদিত এসব সুপেয় পানি প্রথমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার গ্রাহকদের পাশাপাশি কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের কোরিয়ান ইপিজেড ও আনোয়ারার চায়না ইকোনমিক জোনে সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে নির্ধারিত এসব স্থানে সংযোগ দেওয়ার পর প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী শিল্পাঞ্চলেও সংযোগ দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা এবং শিল্পাঞ্চলগুলোর জন্য এই ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে দৈনিক ৬০ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার ও দুটি রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি থেকে দিনে ছয় কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা যাবে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষদিকে। এই প্রকল্প থেকে বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার ১০ হাজার নতুন গ্রাহক সংযোগ পাবে। পাশাপাশি আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বিদ্যমান শিল্পাঞ্চলগুলোতেও সুপেয় পানির সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর বাইরে কিছুদিন আগে জাইকার একটি দল একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এই ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে সুপেয় পানির সংযোগ নিয়ে যেতে চায় তারা। সেই লক্ষ্যে জাইকা ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেছে।
বোয়ালখালীর ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়ী পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানির সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, পাইপলাইন বসানো গেলে অবশ্যই পানির সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। তবে প্রথমে প্রকল্প স্থানের পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাসিন্দা ও শিল্পাঞ্চলগুলোতে সংযোগ দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে মাতারবাড়ী শিল্পাঞ্চলে সংযোগ দেওয়া হবে। কেননা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জাইকার বড় বড় প্রকল্প রয়েছে।
বর্তমান প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত ৬ কোটি লিটার পানি দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। ১১৩ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ। বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরার ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে পানির পাইপলাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুদিকে চলে গেছে। একটি অংশ গেছে আহলা দরবার শরিফ হয়ে পটিয়া পৌরসভা এলাকার দিকে। অপরটি কর্ণফুলীর শিকলবাহা ও মইজ্জ্যারটেক হয়ে আনোয়ারায় চলে গেছে। তবে পটিয়ার কালারপোল সেতুর একটি রিভার ক্রসিংয়ের কারণে প্রকল্পটি একটু বিলম্বিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্প থেকে উৎপাদিত পানি বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ ও আবাসিকের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে। বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ পাবে। এরপরও উৎপাদিত আরও কিছু পানি থাকবে। সেগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দেবে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অনুমোদনের প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ ও ব্যয় দুটোই বাড়ানো হয়। প্রথমে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হলেও তা বাড়িয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। আর বর্ধিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
কার্যাদেশ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ হিসেবে কোরিয়ান সরকারের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব কোঅপারেশন ফান্ডের (কেইডিসিএফ) পক্ষে কোরীয় এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা দিচ্ছে ২০ কোটি।