সিলেট অফিস
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২০:১৯ পিএম
সিলেটে চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। জেলার নদী-নালা, খাল, বিল, হাওর, ডোবা ও জলাশয়ে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে এই জাল অবাধে ব্যবহার করছেন জেলেরা। এতে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। পাশাপাশি জলজ জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন এসব নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবু চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার থামছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, ধলাই, সারি ও পিয়াইনসহ স্থানীয় ছোট-বড় প্রায় সব নদ-নদীতে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে এ জাল ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া হরিপুর ও গোমড়ার হাওরসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য হাওর, জলাশয় ও ডোবায় মাছ ধরতে স্থানীয় জেলেরা চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করছেন। এই জালে শুধু মাছ নয়; কাঁকড়া, কুঁচিয়া, কচ্ছপ, সাপ, শামুকসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণীও আটকা পড়ে। ফলে এসব নদ-নদী, হাওর-জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, শুরুর দিকে নদ-নদীতে এ জাল ব্যবহার হলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামের খাল-বিল ও জলাশয়ে। এ জালের ফাঁস অন্যান্য জালের চেয়ে চিকন ও ছোট। ফাঁসের আকার ৪ সেন্টিমিটারের চেয়েও কম। জালের মধ্যে উজান-ভাটি দুদিকেই মাছের একাধিক প্রবেশ ফাঁদ রয়েছে। ফলে এই জালে সব ধরনের মাছ ছেঁকে ওঠে। শুধু তা-ই নয়, মাছের ডিম পর্যন্ত আটকে যায়। সহজেই মাছ ধরা যাওয়া এবং দাম কম হওয়ায় জেলেদের মধ্যে এ জালের ব্যবহার বাড়ছে। গ্রামের হাটবাজার থেকে সহজে এই জাল ক্রয় করা যায় বলেও জানান অনেকে।
গোয়াইনঘাটের তোয়াকুলের বাসিন্দা সমাজকর্মী খলিলুর রহমান বলেন, দুপুর হলেই ডিঙি নৌকায় এই চায়না দুয়ারি বা রিংজাল নিয়ে হাওর-বিলে নেমে যান স্থানীয় জেলেরা। সেখানে অনেকটা ফাঁদের মতো পাতা হয় জাল। রাতভর হাওরের পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। এ সময় জালে ধরা পড়ে চিংড়ি, পুঁটি, ট্যাংরা, কৈ, শিং, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ। এছাড়া মাছের সাথে নানা জলজপ্রাণীও আটকা পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, ‘আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম। কিন্তু চায়না দুয়ারি রিংজাল আসার পর কারেন্ট জাল পাতা বন্ধ করে দিয়েছি। কারেন্ট জালের চেয়ে রিংজালে সহজে বেশি মাছ পাওয়া যায়। ২৫ হাজার টাকা খরচ করে পাঁচটি চায়না দুয়ারি রিংজাল কিনেছি।’
ওই জেলে আরও বলেন, ‘পেশায় জেলে নয়- এমন মানুষও চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরছে। স্থানীয় হাটবাজারে মান ও আকার অনুসারে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এ জাল।’
কানাইঘাট মুলাগুলের সালেক আহমদ বলেন, এই নিষিদ্ধ জাল বন্ধ না হলে অচিরেই দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা দরকার।
গোয়াইনঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, দেশের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে এমন চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। মৎস্য আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ কোনো ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকার কিংবা বেচাকেনা করা যাবে না। দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সেগুলো জব্দ করার পাশাপাশি যারা বিক্রয় ও ব্যবহারে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।