তানভীর হাসান, মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২০:১৩ পিএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২১:৩৭ পিএম
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার। প্রবা ফটো
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দীঘিরপাড় বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত চার দিন ধরে শুরু হয়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনে বাজারটির প্রায় ১১টি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া, হুমকির মুখে রয়েছে বাজারের আরও ১০টি দোকান।
স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভাঙন বন্ধ করতে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রকল্প হাতে নেয় প্রশাসন। চলতি বছরে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখনও বাঁধের দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। ঘূর্ণি স্রোতে ২০০ বছরের পুরোনো দীঘিরপাড় বাজারের কামারপট্টি এলাকার নদীর তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে পুরো বাজারটি ঝুঁকিতে পড়েছে। বাজার ঘাটের পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব দিকের ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙন চলছে, যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙনের কারণে কামারপট্টি ও তার পাশের কিছু দোকানের সমস্ত মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় দোকান সরাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মার ভাঙন রোধে ২০২২ সালের মে মাসে লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড় বাজার পর্যন্ত পদ্মার বাম পাশের তীরের ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৪৬ কোটি টাকা। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক ভাগে এ বাঁধ নির্মাণের কাজ পায়। তাদের মধ্যে সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিংকে দীঘিরপাড় অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যবসায়ী স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘শুনতাছি বাঁধ হইব। কাজও চলতেছে। দুদিন কাজ করলে ঠিকাদার ১৫ দিন কাজ করে না। তারা যদি ঠিকমতো কাজ করত, তাহলে আমাদের এই অবস্থা হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে অবস্থা (ভাঙন) দেখতেছি, তাতে আমরা হুমকির মুখে আছি। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের দোকান ঘর ভাইঙ্গা যেতে পারে।’
কামার যোগেশ মণ্ডল বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে বাজারের মানুষ ফোন দিয়ে বলছে, আপনাদের দোকান ভেঙে যাচ্ছে। তখন তাড়াতাড়ি বাজারে আসি। এসে দোকান ঘরটি কোনো রকম সরাইয়া নিতে পেরেছি। এখন অন্যের দোকানে বসে কাজ করতেছি। বাঁধটা যদি ঠিকমতো দিত, তাহলে আমাদের এই দোকান ভাঙত না। তারা কাজ করছে গাফিলতি কইরা। তাদের করণে আমাদের আজকে এই অবস্থা।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপক মোশাওয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্লক তৈরির জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার ছিল, আমরা সময়মতো সেই জায়গা পাইনি। এজন্য কাজ করতে পারিনি। জায়গা ভাড়া নিয়েছি। এখন ব্লক তৈরির কাজ চলছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছি। সে সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।’
মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। তবে এখনও কাজের সময় বাড়ানো হয়নি। যেভাবে পানি বাড়ছে এ অবস্থায় পানি না কমা পর্যন্ত ব্লক ফেলা যাবে না। সে জন্য প্রকল্পের সময় বাড়ানো হতে পারে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।’