আবুল হাসান, মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২০:০৯ পিএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৪ পিএম
সুন্দরবন তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। সোমবার পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায়। প্রবা ফটো
গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। বনের বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি নতুনভাবে অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বর্ষার প্রভাবে বন এখন সুন্দরী, গোরান, গোলপাতা ও অন্যান্য গাছে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের কারণে লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মিষ্টি জলের পুকুরগুলো সম্প্রতি বর্ষার বৃষ্টির কারণে মিঠা জলে পরিপূর্ণ হয়েছে, যা সুন্দরবনকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভূমিকা রেখেছে, আবার প্রাণশক্তিতে ভরে দিয়েছে।
পর্যটক, জেলে, বননির্ভরশীল এবং মধু সংগ্রহকারীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার কারণে সুন্দরবন এখন একটি নির্মল নীরবতা উপভোগ করছে, যা মাছ ও বন্য প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধি, তাদের অবাধ বিচরণ, প্রজনন কার্যক্রম এবং নতুন উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
ম্যানগ্রোভ বনে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে সুন্দরবনের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, গত ২৬ মে রেমালের ক্ষয়ক্ষতি আগের ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরকে ছাড়িয়ে গেছে, জলোচ্ছ্বাস ২০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় শতাধিক মিঠা পানির পুকুর লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে শতাধিক হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী মারা যায়। এ ছাড়া অসংখ্য সুন্দরী, গরান ও গোলপাতা গাছসহ অন্যান্য উদ্ভিদের প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ ইতোমধ্যে উদ্ভিদের পুনর্জন্ম, মাছ ও বন্য প্রাণীর প্রজননে সুবিধার জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ এবং জেলে, বাওয়ালী, মধু সংগ্রহকারীদের প্রবেশ সীমিত করেছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার এক মাসের মধ্যেই সুন্দরবন তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরে পেতে শুরু করেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের ওসি হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ম্যানগ্রোভ বন ৩৫০ প্রজাতির পাখি, ২৬০ প্রজাতির প্রাণী, ৩০-৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৮-১০ প্রজাতির উভচর এবং ২০০ প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীতে সমৃদ্ধ।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৪৩ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ১৪৩ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৮০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন। বিদেশির সংখ্যা ১ হাজার ১০৩ জন। রাজস্ব আদায় হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮০ টাকা। মে মাসে ভ্রমণ করেছেন ৫০৮ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৪০ টাকা। ছোট-বড় প্রায় ৫০টি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটক ভ্রমণ কাজে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।