সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ১৩:১৬ পিএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪ ১৫:৪৯ পিএম
এখন আর রাতে নয়, দিনের বেলায়ই সীমান্তের ওপার থেকে আসছে চোরাই কয়লা। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেকের (নিলাদ্রী লেক) পাশের একটি ডিপোতে অর্ধশতাধিক শ্রমিককে ভারতীয় সীমানার উঁচু পাহাড় থেকে কয়লা এনে রাখতে দেখা যায়।
মোবাইল বের করে ছবি নেওয়ার চেষ্টা করলে, এক শ্রমিক হাতে দা নিয়ে উচ্চস্বরে বলেন, ‘মোবাইল নামাও, পেটে লাথ দিতে আইছো’।
এর কিছুক্ষণ আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী বড়ছড়া থেকে বন্যা নিয়ে সরাসরি সংবাদ প্রদর্শনের সময়ও দেখা যায়, পাহাড়ের ওপর মাথায় কয়লার বস্তা নিয়ে সারিবদ্ধভাবে নামছে শ্রমিকেরা।
হাতে দা আর কয়লার বস্তা মাথায় নিয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কেন করছেন, প্রশ্নের উত্তরে এক শ্রমিক বলেন, পাহাড়ের ছোট ছোট গাছপালা কেটে এগোতে এই দায়ের প্রয়োজন পড়ে।
কয়লা নামার স্থানটিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখা যায়, অর্ধশত শ্রমিকের একটি দল পাহাড় থেকে নেমে সিরাজ লেকের সামনের একটি ডিপোতে প্রবেশ করছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বস্তার কয়লা খালি করে লেকের পানিতে হাত, পা ও বস্তা ধুয়ে আবারও পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দেন তারা।
কথা হয় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় শ্রমিক বদরুলের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি বস্তা কয়লা সাত থেকে আটশ টাকায় ডিপোতে বিক্রি করেন তারা। চোরাই পথে প্রতিদিন দুই থেকে তিন বস্তা কয়লা আনা যায়।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই জায়গা দিয়ে চোরাই কয়লা নামছে বহুদিন ধরে। আগে রাতে লুকিয়ে নামিয়ে ঘরবাড়িতে রেখে বিক্রয় করলেও, এখন দিনদুপুরে আসে। এরপর কয়লাগুলো ডিপোতে রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চোরাকারবারিরা কম ব্যবহৃত প্রভাবশালীদের ডিপো ভাড়া নেন। তারা পুলিশ-বিজিবির সোর্স পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের সহায়তায় অবৈধ পথে কয়লা এনে এসব স্থানে রাখেন। সোর্সদের মধ্যে কালাম, ইসহাক, রতনের নাম স্থানীয়দের মুখে মুখে রয়েছে। এসব ডিপো থেকে এলসির মাধ্যমে কয়লা আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। সেজন্য অবৈধ কয়লার ব্যাপারে কারও নজর পড়ে না।
শুল্ক স্টেশন থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে পথে এসব কয়লা আসায় কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তা আমলে না নেওয়ায় এখন দিনের বেলায়ই চোরাই কয়লা আসছে।
এ বিষয়ে বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ট্যাকেরঘাট ফাঁড়ি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, অবৈধ পথে শ্রমিকরা যাতে কয়লা আনতে না পারেন সে বিষয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিষয়গুলো তদারকি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম মাহমুদ হাসান বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে কয়লা আনার সুযোগ নেই। যারা কয়লা আনার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।