রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ২২:০৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ২২:২২ পিএম
রংপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করা হয়। প্রবা ফটো
রংপুরে স্বামীর ঘুম ভাঙানোর কারণে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী ছইদার রহমান ওরফে সহিদার। পরে সেই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও চিকিৎসকের সামনে স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণাসহ জীবনসঙ্গীনীর মৃত্যুতে দিশেহারার নাটক করেন সহিদার।
রবিবার (১৪ জুলাই) বিকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। এ ঘটনায় শনিবার নিলুফার বাবা আব্দুল মমিন বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, স্ত্রীর লাশ ময়নাতদন্ত না করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য পায়তারা করে সহিদার। পুলিশের সন্দেহ হলে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে স্বামী সহিদারকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছোট হাজিপুর তেলিপাড়া গ্রামের আব্দুল মমিনের মেয়ে নিলুফার ইয়াসমিনের সঙ্গে ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় একই এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে ছইদার সরকার ওরফে সহিদারের। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। সংসার জীবনে বিভিন্ন সময় তাদের মাঝে মনোমালিন্য লেগে থাকত। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সহিদার স্থানীয় বাজারে নাইট গার্ডের ডিউটি শেষে ভোরে তার নিজের বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। নিলুফা দুপুর বেলায় স্বামী সহিদারকে ঘুম থেকে একাধিকবার ডেকে গরুকে পানি খাওয়ানোর জন্য বলে। এতে সহিদার বিরক্ত ও রাগান্বিত হয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট ধরে নিলুফার গলা টিপে ধরে। এতে নিলুফা নিস্তেজ হয়ে পড়লে সহিদার তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপরে ফেলে রেখে আলু ক্ষেতে পানি দিতে চলে যায়। এর আধাঘণ্টা পর বাড়িতে চিৎকার শুনে ফিরে আসে সহিদার। হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিলুফার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। এ সময় নিলুফারকে বদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় স্বামী সহিদার প্রভাবিত করে নিলুফারের বাবাসহ পরিবারের কাউকে অপমৃত্যুর মামলা করতে দেয়নি। সেইসঙ্গে লাশ ময়নাতদন্ত করতে না দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। ময়নাতদন্তে সন্দেহ হলে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। সম্প্রতি নিলুফার মৃত্যুর ফরেনসিক প্রতিবেদন পুলিশের কাছে আসলে সন্দেহভাজন স্বামী সহিদারকে ১৩ জুলাই রাত আড়াইটায় বদরগঞ্জ উপজেলার কচুবাড়ির হাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
তিনি আরও বলেন, নিলুফারের মৃত্যুর পর তার স্বামী সহিদার পাগলের মত আচরণ করছিল। যেন স্ত্রীকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে নিলুফার লাশ যেন ময়নাতদন্ত না করা হয় সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ সদস্যদের বিচক্ষণতার কারণে তারা সেই সময় লাশ ময়নাতদন্ত করেছিল বলেই হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, ইফতেখায়ের আলমসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।