ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪২ পিএম
বাঁশ কাটার নিষিদ্ধ সময়ে ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচার করা হচ্ছে বাঁশ। উপজেলার নয়াবাজার এলাকা থেকে বুধবার দুপুরে তোলা। প্রবা ফটো
বাঁশের বংশ প্রজননের জন্য জুন-জুলাই-আগস্ট- এ তিন মাস বাঁশ কাটার নিষিদ্ধ সময়। এ সময়ে বাঁশ আহরণ, কাটা ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বন বিভাগের। অথচ তা অমান্য করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বনাঞ্চল থেকে কাটা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।
আইন যাদের বাস্তবায়ন করার কথা বাঁশ কাটার নিষিদ্ধ সময়ে সেই বন বিভাগই দিচ্ছে বাঁশ পরিবহনের জন্য ট্রান্সপোর্ট পারমিশন বা টিপি। বন বিভাগের টিপি নিয়েই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পাচার করছে কাঁচা বাঁশ। ফলে প্রজনন সময়ে মানা হচ্ছে না সরকারি বিধি। অথচ বন আইনে উল্লেখ রয়েছে বছরের জুন, জুলাই, আগস্ট মাস বাঁশের বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। বাঁশের চারা (কোড়াল) জন্ম নেওয়ার এ সময়ে বাঁশের বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক রাখতেই কাটা, আহরণ এমনকি পরিবহণও বেআইনি।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে নিষিদ্ধ সময়ে বাঁশ পাচার কাজে নিয়োজিত একাধিক চক্র। এর মধ্যে কিছু বাঁশ সড়কপথে পাচার হলেও কর্তনকৃত বাঁশের বড় অংশই নদীপথ ব্যবহার করে চলে যায় গন্তব্যে। অন্যদিকে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিষেধাজ্ঞার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব বাঁশ পাচার করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে (জুন থেকে আগস্ট) তিন মাস বাঁশের বংশবিস্তারের উপযুক্ত সময়। বাঁশের কিছু প্রজাতি রাইজোমের মাধ্যমে, আবার কোনো কোনো বাঁশ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশ তিন বছরের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে হয়ে ওঠে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ফটিকছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে মিতিঙ্গা, মুলি, নলী ছোটিয়া, বাজালি, গুঁড়া ও উলুসহ আরও কয়েক প্রজাতির বাঁশ ব্যাপক হারে উৎপাদন হয়।
বর্তমানে দেশে-বিদেশে এসব বাঁশের বিপুল চাহিদা থাকায় কদর বেড়েছে আগের চেয়েও বেশি।
গত বুধবার (১০ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের আওতাধীন ধূরুং বিটের অভ্যন্তরে কাটা হচ্ছে মিতিঙ্গা প্রজাতির বাঁশ। কর্তনকৃত বাঁশগুলো চাঁদের গাড়িতে বোঝাই হয়ে পাচার হচ্ছে। এ সময়ে একাধিক গাড়ি থামিয়ে টিপি দেখতে চাইলেও কোনো চালক টিপি দেখাতে পারেননি। পরে বিট কর্মকর্তা অবনী কুমারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বাঁশ পাচারের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
নারায়ণহাট ইউনিয়নের বালুখালি বিটে গিয়েও দেখা যায়, ফটিকছড়ি-নারায়ণহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশে রাখা হয়েছে সদ্য কর্তনকৃত বাঁশের একাধিক স্তূপ। তবে ওই অফিসের বিট কর্মকর্তা মো. আলাল উদ্দিন বলেন, ‘তার অধীন বিটে কোনো বাঁশ কাটা হচ্ছে না।’ এ ছাড়া দাঁতমারা বিটের ইসলামপুর গ্রামের ঢালারমুখ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সংরক্ষিত বন থেকে পাচারের জন্য কর্তনকৃত বাঁশ এক জায়গায় জড়ো করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। তা ছাড়া করেরহাট রেঞ্জের অধীনে আঁধারমানিক বিট, হাসনাবাদ রেঞ্জের অধীনে তাঁরাকো বিট, হাটহাজারী রেঞ্জের অধীনে সর্ত্তা বিট থেকেও বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রতিনিয়ত বাঁশ কেটে পাচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণহাট রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. ইলিছুর রহমানের অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখায়।
পরে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (নারায়ণহাট ও করেরহাট) মো. হারুন অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে যোগসাজশের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ তিন মাস কোনো অবস্থাতেই বাঁশ কাটা যাবে না। ট্রান্সপোর্ট পারমিশন (টিপি) দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হয়তো কেউ কেউ চুরি করে টিপির কথা বলে পার পেতে চাইছে।