× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দেনমোহর লাখ টাকার বই

কক্সবাজার অফিস

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৩২ পিএম

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৩ পিএম

দেনমোহর লাখ টাকার বই

ইস্টিশন; একটি বুক স্টল। অদূরে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটায় ইস্টিশন। যার ভেতরে দেয়ালঘেঁষা কয়েকটি শেল্ফ। থরে-থরে বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের রচিত পুস্তকের সমাহার। সেই ঘরের ফ্লোরে লাল পাটি পেতে বসেছেন সাত-আট জন। সবার মাঝখানে রাখা ফুলের তোড়া। যেন জ্ঞানবিতরণ কেন্দ্রে উল্লাসের আয়োজন। ঠিক তা-ই; এখানেই একসঙ্গে থাকার সামাজিক স্বীকৃত বাঁধনে জড়ালেন দুজন। রীতি-নীতি মেনে যুগলবন্দি হয়েছেন অনুরণন সিফাত ও মোজাহিদুল ইসলাম রাকিব। বিয়ের দেনমোহর ১ লাখ টাকা; তবে তা অর্থে পরিশোধ হবে না, মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর প্রচেষ্টায় পূর্ণতা পাবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে ভাগ করে লাখ টাকার বই কিনে ১০টি স্কুলে লাইব্রেরি গড়তে সহযোগিত করবেন।

সাদামাটা এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও ছিল অনন্য। ২৯ জুন দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট-সংলগ্ন ইস্টিশনে কাবিননামা সম্পাদন শেষে নবদম্পতি গন্তব্যে গেছে রিকশায় চড়ে। কাছের একটি মোটেলে স্বল্প পরিসরে হয় প্রীতিভোজ। সেখানে গান-আড্ডায় পরিবেশ মাতোয়ারা করে তোলে বন্ধুমহল। সন্ধ্যায় সবাই ফেরেন ইস্টিশনে। বই-ঘরে মুক্ত আড্ডার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার পরিসমাপ্তি ঘটে।

সব ছাপিয়ে একটি প্রশ্ন নিশ্চয় করা যায়Ñ সময়ের হাওয়ায় দোল না খেয়ে, কেন তারা স্রোতের বিপরীতে? অনুরণন-মোজাহিদুল দম্পতির ভাষ্যÑ দুজনের পড়াশোনা-পেশা ভিন্ন। এক জায়গায় মিল; দুজনই বইপ্রেমী। টুকটাক লেখালেখি চর্চাও আছে। বড় একটি আবেগের জায়গা থেকে ‘বই-প্রথা দেনমোহর’ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন।

কীভাবে আসলে কী হয়েছে? শোনা যাক অনুরণনের মুখে। যিনি ইস্টিশনের স্বত্বাধিকারী। চাকরির সুবাধে কক্সবাজার এসে পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন এই নারী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রথাগতভাবে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ভেবে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। আমার আপত্তি ছিলÑ বিশেষত সোনাদানা বা অর্থের বিনিময়। বন্ধনটা তো আসলে হৃদয়ের, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার। সেখানে ধরবাঁধা নিয়ম থাকা উচিত নয়। 

বিয়ের দলিল বা কাবিননামা সম্পাদনে কনের ইচ্ছায় দেনমোহর নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। কী চেয়েছিলেন অনুরণন। তিনি বলেন, আর্থিক চাওয়া তো আমার ছিল না। ঠিক করলাম সেই টাকা দিয়ে স্কুলে বই কিনে দেব, যেন লাইব্রেরি গঠন করা যায়। এ বছর জানুয়ারিতে খাগড়াছড়ির একটি স্কুলে সহযোগিতার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করেছে ইস্টিশন। মনে হয়েছে, এই কলেবরটাই বরং বৃদ্ধি পাক। আমার সঙ্গী বন্ধুটি বললেন, এই ভালো কাজে আমি আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে চাই। ১ লাখ টাকার বই দিয়ে ১০টা স্কুলে লাইব্রেরি গড়ে দিতে চাই। তাহলে ১০টা প্রান্তিক স্কুলের বাচ্চারা সৃজনশীল বই পড়ার সুযোগ পাবে।

স্বামী মোজাহিদুল প্রকৌশলী হলেও পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত মোজাহিদুল বলেন, দেনমোহর তো একজন নারীর সামাজিক মর্যাদা বা সুরক্ষার জন্য বিবেচ্য। এক্ষেত্রে আমার সঙ্গী আত্মনির্ভরশীল, কর্মঠ, সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ। কারও কাছ থেকে তার আর্থিক নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

সাদামাটা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে অনুরণন বলেন, এটা তো সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা সামাজিক স্বীকৃতি। আরও ছোট পরিসরে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমাদের পরিবারের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হয়েছে। আসলে আড়ম্বরের ভিড়ে দুটো মানুষের ভালোবেসে একাত্ম হওয়ার দিকটির প্রাধান্য লোপ পায়। আত্মার যোগ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছি ‘তোমার হৃদয় আমার হোক, আমার হৃদয় তোমার হোক।’ 

সামনের সময় কেমন দেখতে চায় নবদম্পতিÑ এ প্রশ্নে মোজাহিদুল বলেন, ভবিষ্যতের যাত্রা মানেই অনিশ্চিত। জীবনের যাত্রা শেষ হয় শূন্যে গিয়ে। এই শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার আগে মানুষ এই যাত্রাটাকে অর্থবহ করতে চায়। টুকটাক লিখছি, একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। ভালো কিছু করে যেতে চাই। সেটা লেখালেখিও হতে পারে।

একই প্রশ্নে অনুরণন বলেন, সব সময় সুন্দরের সাথে থাকতে চেয়েছি, শুদ্ধতার চর্চা করতে চেয়েছি। পরিবর্তনের পথে লড়াইয়ের সঙ্গী পাওয়াটা মুশকিল। আমি পেয়েছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চাই। সুন্দর আর ভালোবাসায় যৌথ খামার হোক, চাষাবাদ হোক স্বপ্নদের। আমার ইস্টিশনও এ বছর প্রকাশনা জগতে পা দিয়েছে। এটাকে আরও ঋদ্ধ করতে চাই। কেউ স্কুলে লাইব্রেরি করে দিতে আগ্রহী হলে ইস্টিশন সানন্দে সহযোগিতা করবে।

দেনমোহরের বিনিময়ে স্কুলে বই কিনে দিয়ে লাইব্রেরি গড়তে সহযোগিতায় কারা পাবে সুবিধা। অনুরণন-মোজাহিদুল দুজনের ভাষ্যÑ বিয়ের দিনই দুটো স্কুলে বই দিয়ে কার্যক্রম শুরুর ইচ্ছা ছিল। দূরত্বের কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। লক্ষ্য আছে প্রাথমিকের সঙ্গে মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও এই সহযোগিতা করার। প্রতিটি স্কুল পাবে ১০০টির বেশি ও শেল্ফ। সব বই ইস্টিশনে এসে পৌঁছেছে। বাছাই করা হয়েছে প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত স্কুলগুলো। এর মধ্যে বান্দরবানের লামা ও আলিকদমের তিনটি পাহাড়ি স্কুল, রংপুরের একটি ও রাজশাহীর একটি স্কুল ঠিক করা আছে। ঢাকার পথশিশুদের একটি স্কুল ও আরও কিছু স্কুল নির্ধারণের কাজ চলমান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা